ডক্টর মাওলানা মুহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দীন
عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم انه قال الحاج والعُمار وقد الله عن ابي هريرة رضى الله تعالى :
ان دعوه اجابهم وان استغفروه غفر لهم راه ابن ماجه)
অনুবাদ: হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত তিনি ৪/ ইরশাদ করেন হজ্ব ও ওমরাহ আদায়কারীগণ আল্লাহ তা’আলার প্রতিনিধি দল। তারা আল্লাহর নিকট দোয়া করলে তা তিনি করল করেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তাদের ক্ষমা করেন।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা
রায়ায়, যাকাত, ও রোযা যেরকম ইসলামের একটি অপরিহার্য বিধান, হজ্জ্বও অনুরূপ একটি অবশ্যকীয় বিধান। ইকোন ব্যক্তি নামায, যাকাত, রোযা সবকিছু পালন ওহলো: কিন্তু হজ্জ ফরয হলে তা আদায় করলো না, তাহলে পেরিউক্ত আমলসমূহ তার মুক্তি বা নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে না। হজ্জ অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় ভিন্নধর্মী। কারণ হজ একমাত্র ইবাদত, যাতে শারীরিক ও আর্থিক উভয় প্রকারের ইবাদত রয়েছে। তদুপরি ইশক ও প্রেম-প্রীতিই মুখ্য। সুতরাং হজ্জ সে ব্যক্তিই করতে পারে যার কাছে ইশক ও ভালবাসা যুক্তির বা বিবেকের উপর প্রাধান্য লাভকরে থাকে। খানায়ে কা’বার চারদিকে তাওয়াফ করা সাফা-মারওয়া সাঈ করা বা দৌড়ানো, রামী বা কংকর দিক্ষেপ করা মূলত আল্লাহ তা’আলার সস্মরণকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিধান করা হয়েছে। যেমন হযরত আবেস ইবনে জাহিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত যে, “হযরত ওমর ফারুকু-এ আজম রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হাজরে আসওয়াদের নিকট আসলেন এবং তাকে চুমু দিয়ে বললেন যে, আমি জানি তুমি পাথর, কাউকে উপকার বা ক্ষতি করার মত ক্ষমতা তোমার নেই। প্রিয় নবীজীকে যদি আমি তোমাকে চুমু দিতে না দেখতাম তাহলে আমি ওমরও তোমাকে কখনো চুমু দিতাম না।” এ হাদীস দ্বারা বুঝা গেল নবীজীর ভালবাসা ও স্মৃতিচারণ হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুকে চুমু খেতে বাধ্য করল। তাঁর নবীপ্রেম যেন একথা ঘোষণা করলো যে, নবী-ই আকরাম যখন হাজারে আসওয়াদে চুমু দিয়েছেন, তখন থেকে ওই পাথরের মর্যাদা ও বরকত আরো বেড়ে গেছে। আর এ ধরনের প্রেমিক ও
আশেক বান্দাদের জন্য যে কোন আহবানে সাড়া দান এবং যে কোন ধরনের ক্ষমা প্রার্থনা-টাই নিজের জন্য হোক বা মুসলিম উম্মাহর জন্য হোক, কবুল হবার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। যেহেতু ইসলামের পঞ্চবুনিয়াদের অন্যতম হলো পবিত্র হচ্ছে বাইতুল্লাহ। বৎসরের এক নির্দিষ্ট সময়ে মহান রাব্বুল আলামীন তার কতিপয় নির্বাচিত বান্দাকে স্বীয় মেহেরবানীতে ধন্য করে আপন ঘরের মেহমান করে নিয়ে যান। তাইতো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল হতে লক্ষ লক্ষ মুসলমান খোদার প্রেমে পাগলপ্রায় হয়ে ছুটে যান খানায়ে কাবার নূরানী আঙ্গিনায়। দৈহিক, মানসিক, আর্থিক পরিশ্রমের সমন্বিত ইবাদত এই হজ্জ্ব এক দিক থেকে যেমন আল্লাহর হুকুম পালন, অন্যদিকে রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের মোক্ষম সুযোগ। এছাড়া হজ্জ্বের বিভিন্ন আহকাম পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শন করতে হয়। আল্লাহ পাকের সেই সমস্ত নিদর্শন অবলোকন করতে বান্দার ঈমান আক্বিদা হয়ে উঠে আরো দৃঢ়। ইয়াক্বীন হয় মজবুত, ইবাদতের প্রতি বেড়ে যায় বহুগুণ আন্তরিকতা।
অধিকন্তু পবিত্র হজ্বের মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিম মহা মিলনের যে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয় তা একদিকে ইসলামী ঐক্যের ধারাবাহিকতা সুরক্ষিত হয়। অপরদিকে ইসলামী শক্তি প্রমাণিত হয়। এতে থাকেনা মুসলামানদের মধ্যে বর্ণ বৈষম্য, দেশ ও ভাষার ভিন্নতা, গড়ে উঠে বিশ্বব্যাপী সাম্য, মৈত্রী, সম্প্রীতি আর সৌহার্দ্যের প্রাচীর।
হজ্জের মত সুন্দর ও অনন্য মিলনক্ষেত্র বিশ্বের অন্য কোন ধর্মে নেই। হিজরী নবম সনে এই হজ্জ্ব আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন ফরয করেছিলেন। সবার উপর নয় বরং স্বচ্ছল ধনবান, মক্কা-মদীনা শরীফে যাতায়াত এবং আনুষঙ্গিক
হাদাস
খরচাদি বহনে সম্পূর্ণ সক্ষম তাদের উপর, তাও জীননে একবার ফরয। এ পর্যায়ে আল্লাহ পাক ইরশাদ করনে-
ان اول بيت وضع للناس للذى ببكة مباركاً وهذى للعالمين فيه آيات بينات مقام ابراهيم ومن دخله كان امنا والله على الناس حج البيت من استطاع إليه سبيلام
ومن كفر فان الله غنى عن العالمين
অর্থাৎ- নিশ্চয় প্রথম ঘর যা মানবজাতির ইবাদতের জন্য নির্তিম হয়েছে আর সেটা পবিত্র মক্কায় অবস্থিত। এতে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দশনসমূহ বিশেষত: মাক্কামে ইব্রাহীম। যে ব্যক্তি এতে প্রবেশ করে সে নিরাপদ। আল্লাহর জন্য মানবজাতির উপর ঐ ঘরের হজ্জ করা ফরয যে ঐ ঘর পর্যন্ত যেতে পারে। আর যে অস্বীকার করে তবে (মনে রাখা
দরকার। আল্লাহ তা’আলা সমগ্র জাহান হতে অমুখাপেক্ষী। অতঃপর ইরশাদ করলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন, সুতরাং তোমরা হজ্জ্ব আদায় করো। কিতাব, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস-ইসলামের এ দলিলের ভিত্তিতে হজ্জ ফরয।
হজ্জ ফরয হবার সাথে সাথেই তা বিলম্ব ছাড়াই আদায় করা উচিত, যারা এ ব্যাপারে অবহেলা করে তাদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে হজ্জ ফরয Fraft হবে তাদের জন্য রয়েছে মহান রবের পক্ষ হতে মহাপুরস্কার। এ পর্যায়ে পবিত্র হাদীস শরীফে ইশাদ হয়েছে-
من حج فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته امه
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য হজ্ব করলো এবং অশ্লীলতাও পাপাচার বিরত রইলো সে ঐ দিবসটার মতই পবিত্র হয়ে ফিরল যেদিন মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছিল।
হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিতরী পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হজ্ব ও ওমরা পালনকারী আল্লাহর মেহমানস্বরূপ। অতএব তারা আল্লাহর দরবারে যে দোয়া করেন তা আল্লাহ কবুল করেন। অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে- তোমরা হজ্ব করতে থাক। কারণ হজ্ব গুনাহকে এমনভাবে সরিয়ে ফেলে যেমন পানি ময়লাকে পরিষ্কার করে।
হজ্জ্বের যাবতীয় বরকত ফযিলত অর্জন করতে হলে হজ্জ্ব পালন হতে হবে সম্পূর্ণ রিয়ামুক্ত ও পার্থিব উদ্দেশ্য মুক্তভাবে বরং নিরেট খোদাপ্রেমে নিবেদিত হয়ে কোন
প্রকার নাম জাগানো, বিলাস প্রবণবতা ইত্যাদিষ কে على الناس زمان يحج اغنياء الناس للنزاهة সুযোগ এতে নেই। এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি করে মহী প সাল্লাল্লাহ তাআলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন التجارة وفقرائهم نهم للمسئلة وقواتهم للسمعة وسطيهم الديلمي
অর্থাৎ মানুষের উপর এমন একটি খুপ আসবে যখন সি শ্রেনী দেশভ্রমণ, মধ্যবিত্তরা ব্যবসা-বাণি ফকরি-মিসকীনরা ভিক্ষাবৃত্তি এবং শিক্ষিত আলেমরা দ প্রকাশের উদ্দেশ্যেই হজ্ব করবে। সুতরাং হন্ডুরত পালন ক্ষেত্রে নিয়ত হতে হবে সম্পূর্ণ এখলাসপূর্ণ এবং যিয়ারতে মদীনা মুনাওয়ারা ত্রুটিমুক্ত।
হজ্জ এর একটা বিশেষ দিক হল রাসুলে পাক সায়ায়। তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার রওজা পাকের যিয়াধন সুফিয়ায়ে কেরামের মতে মদীনা মুনাওয়ারার যিয়ারতী a ess من حج ولم يزرنى فقد جفاني হচ্ছে হজ্জের প্রাণ। এ পর্যায়ে পবিত্র হাদীস শরীয়ে ইচে হজ্জ করল, কিন্তু আমার যিয়ারত করল না, নিশ্চয় সে আমার প্রতি জুলুম করল। রহমাতের আধায় ক্য প্রতিচ্ছবি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি আস এর দরবার পাপ মার্জনা ও রহমত প্রাপ্তির পবিত্র মকামে। পর্যায়ে ইরশাদ হচ্ছে-
واد ظلموا انفسهم جانوك فاستغفروا الله
واستغفر لهم الرسول لوجدوا الله تو ابا رحيما ( النساء) অর্থাৎ- হে প্রিয়নবী। এরা যদি (গুনাহর মাধ্যমে) নিজেদে উপর জুলুম করে আপনার দরবারে হাজির হয় অত্যন্গ্যা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রাসূল ও আলে জন্য সপারিশ করেন, তবে তারা আল্লাহকে মার্জনায়নী। দয়ালুরূপে পাবে। অন্য এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-এ
زار قبری و جبت له شفاعتیঅর্থাৎ যে ব্যক্তি আমার বা শরীফে যিয়ারত করেছে তার জন্য আমার সুপারিশ নিশ্চিত। হয়েছে।
মদীনা শরীফের আরেকটি ফজিলত হচ্ছে রাসূলায়। সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং উন্ময়াদ মদীনা শরীফে বসবাস করার ও অবস্থানের জন্য বিশেষভা উৎসাহিত করেছেন। এ পর্যায়ে ইরশাদ হচ্ছে-
ومات في مدينة كنت له شفيعا يوم القيامة অর্থাৎ- যে ব্যক্তি মদীনা শরীফে মৃত্যু বরণ করবে হাঁ কিয়ামতের দিন তার সুপারিশকারী হবো। অপর
হাদীস
পাক
من استطاع ان يموت بالمدينة فليمت فمن مات بالمدينة كنت له شفيعًا وشهيدًا
বর্ণিত রয়েছে-
ও অর্থাৎ- যে ব্যক্তি মদীনা শরীফে মৃত্যুবরণ করতে পারে তার উচিত মদীনা শরীফেই মৃত্যুবরণ করা। কারণ যে ব্যক্তি মদীনা শরীফে মৃত্যুবরণ করবে আমি তার জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবো। মসজিদে নববী শরীফের ফজিলত সম্পর্কে বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
صلاة في مسجدي هذا خير من ألف صلاة فيما سوار
الا المسجد الحرام
চর্থাৎ- আমার এই মসজিদে নামায পড়া অপরাপর মসজিদে নামায পড়ার চাইতে হাজারগুণ বেশি উত্তম, জিদে হারাম ব্যতীত। ।জযবুল কুবুল ইলা দিয়ারিল মাহবুব।
অপর হাদীসে বর্ণিত-
et -ما بین بیتی و منبری روضة من رياض الجنة আমার ঘর এবং মেম্বারের মধ্যবর্তী স্থান বেহেশতের বাগান সমূহের মাঝে একটি বাগান।
পরিশেষে বলা যায় পবিত্র হজ্জ্বে বাইতুল্লাহ এবং যিয়ারতে মদীনা মুনাওয়ারা, খোদাপ্রেমিক, নবীপ্রেমিক মুসলমানের জীবনে সবচে: বড় পাওনা। কারণ এটি আল্লাহ এবং রাসূলের একযোগে সন্তুষ্টি অর্জনের মোক্ষম সুযোগ আল্লাহ পাক রাব্বুল আলমীন আমাদের সবাইকে জীবনে অন্তত একবার হলেও হজ্জে বাইতুল্লাহ এবং যিয়ারতে মদীনা মুনাওয়ারার সৌভাগ্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন বিহুরমাতি সাইয়েদিল মুরসালিন।