মুহাম্মদ আবদুল কাদের ছাকিব আল কাদেরী
সহ সম্পাদক: মাসিক আল-ইসতিয়াব
খতিবঃ পাঠানটুলী চাট্টশ্বরাই গায়েবী মসজিদ, আগ্রাবাদ,চট্টগ্রাম।
ওস্তাজ: তৈয়বীয়া তাহেরিয়া সুলতান মোস্তফা কমপ্লেক্স।

মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
اَللّٰهُ الَّذِىۡ خَلَقَكُمۡ مِّنۡ ضُعۡفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنۡۢ بَعۡدِ ضُعۡفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنۡۢ بَعۡدِ قُوَّةٍ ضُعۡفًا وَّشَيۡبَةً ؕ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُ ۚ وَهُوَ الۡعَلِيۡمُ الۡقَدِيۡرُ ۞
অর্থাৎ: আল্লাহ তায়ালাই সে স্বত্তা, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। দূর্বল অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন (শৈশবে) অতঃপর দূর্বল অবস্থা থেকে শক্তিশালী করেছেন (যৌবনে), অতঃপর আবার শক্তিশালী থেকে দূর্বল করবেন (বার্ধক্যে) এবং বার্ধক্য দেবেন। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন, আর তিনি মহাজ্ঞানী এবং মহাক্ষমতাধর। (2)
যৌবন কাল মানুষের জন্য যতোটাই না গুরুত্বপূর্ণ ততোধিক ঝুঁকিপূর্ণও বটে। যৌবনের মাত্রাতিরিক্ত এবং বাধাহীন উম্মাদনা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কাজ নয়! কিন্তু সম্ভব। যে এই উন্মাদনার লাগাম টেনে
ধরতে পেরেছে এবং নিজের নফস কে নিয়ন্ত্রণ করেছে সে সফলতার স্বর্ণচূড়ায় আরোহন করেছে।অপর দিকে যে অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন কে বাছাই করে নিয়েছে যে ধ্বংসস্তূপের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত
হয়েছে। যেমন কুরআনে(3) এসেছে-قد أفلح من
زكاها، وقد خاب من دساها
একজন যুবকের জন্য ভালো থাকাটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হলে ও খারাপ হওয়া একবারেই সহজ।কারণ, অগুন্তি অশুভশক্তির হাতছানি তাকে বারংবার আহ্বান করে। যেনো মনে হচ্ছে, এখনই কোনো ঝড় এসে পুরো জীবন টাকে লন্ড-ভন্ড করে দেবে।
বর্তমান সময়ে তৃতীয় বিশ্বের দিকে তাকালে আমারা দেখি;
যুবসমাজ সংকটময় একটি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একটি বহুমুখী সংকট যেমনঃ ধর্মীয় সংকট, সাংস্কৃতিক সংকট আদর্শিক সংকট,চিন্তাগত সংকট এবং সর্বোপরি বিভিন্ন বিজাতীয় আগ্রাসন এই সংকটের পটভূমিকে আরো দীর্ঘায়িত করেছে। তাই যুব সমাজ কে সচেতন করা এবং অশুভ শক্তির করাল গ্রাস থেকে ফিরিয়ে আনা আমাদের নৈতিক এবং ঈমানী দায়িত্ব। পরিপূর্ণ জীবন বিধান ইসলাম মানব জীবনের এই স্বর্ণযুগ কে খুবই গুরুত্বারোপ করেছে। এব্যাপারে রাসুলে কারীম (দরুদ)
ইরশাদ করেছেন, اغتنم خمسا قبل خمس : شبابك قبل هرمك وصحتك قبل سقمك ، وغناك قبل فقرك – وفراغك قبل شغلك وحياتك قبل موتك
অর্থাৎ: তোমরা পাঁচটি বিষয় কে পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে গুরুত্ব দাও।
তোমার যৌবন কে বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পূর্বে গুরুত্ব দাও সুস্থতা কে অসুস্থতার পূর্বে গুরুত্ব দাও।প্রাচুর্যতা কে দৈন্যতার পূর্বে গুরুত্ব দাও, আবসর কে গুরুত্ব দাও কর্মব্যস্ত হওয়ার পূর্বেই। এবং মৃত্যুর পূর্বে হায়াত কে মূল্যায়ন করো।(4)
যৌবন মানুষের জীবনে এক আগন্তক মেহমানের মতো।ক্ষণিকের জন্য আমাদের আঙিনায় এসে উপস্থিত হয়। আমরা অবহেলা অযত্নে সে মেহমান কে অবমূল্যায়ন করি! গুনাহের কালিমায় নিজের আনালনানা কে নষ্ট করি।
যৌবনকাল হলো খোদা তায়ালার নৈকট্য অর্জন এবং আত্মিক উন্নতির একটি মোক্ষম সময়। মানবজীবনের এই সংক্ষিপ্ত হায়াত ব্যয়ের পুরো ফিরিস্তি মহান আল্লাহ তায়ালা সমীপে উপস্থাপন করতে হবে। রাসুলে আকরাম (দরূদ) ইরশাদ করেন-
عن ابن مسعود، عن النبي صلي الله عليه وسلم قال: لا ترول قدما ابن ادم يوم القيامة حتى يسءل عن خمس : عن عمره فيما أفناه وعن شبابه فيما أبلاه وعن ماله من أين اكتسبتة وفيما انفقه وماذا عمل فيما علم
অর্থাৎ, কিয়ামতের ময়দানে আদম সন্তানের পদদ্বয় ততক্ষণ মার্যন্ত একটুও নড়তে পারবে না যতক্ষণ পাঁচটি বিষয়ের প্রশ্নের যথার্থ জবাব বান্দা দিতে পারবে না।”তার বয়স সম্পর্কে, সে তা কী কাজে ব্যয় করেছে। তাঁর যৌবন সসম্পর্কে সে কোন পথে খরচ করেছে। তার সম্পদ সম্পর্কে কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে।যে জ্ঞানার্জন করেছিল সে অনুযায়ী আমল করেছে কি না? (5)
চলবে…. ان شاء الله
——————————————–
1-‘ ড. ফজলুর রহমান’ ; আল-মু’জামুল ওয়াফী(আরবি-বাংলা অভিধান)।
2-আল কুরআন, সূরা রূম- ৩০:৫৪, অনুবাদ : ই ফা বা।
3-আল কুরআন, সূরা শামস-৯১: ৯,১০।
4-হাকিম; মুস্তাদরাক- হাদিস নম্বর: ৭৮৪৬
5-শায়খ ওয়ালি উদ্দিন আল খতিব(রহ); মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাব আল আদব।