জাতিগত সম্প্রীতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ভূমিকা

ইসলাম সলাম মানবতার ধর্ম, সম্প্রীতির ধর্ম, সৌহার্দের ধর্ম, মানবসমাজে বহু ধর্ম, জাতির চিন্তা এবং মতের মানুষ বসবাস করে, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ বলতে আমরা বুঝি। সমাজে সকল সম্প্রদায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সহাবস্থানের সহিত শান্তিতে বসবাস করা”(1)

পৃথিবীতে ইসলামের পাশাপাশি আরো বহু ছোটো-বড়ো ধর্মের অস্তিত্ব রয়েছে, কিন্তু এসব দ্বীন বা ধর্মের মধ্যে ইসলামের স্বাতন্ত্র হলো; ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে বিষোদগার, হঠকারিতা, বৈষম্য এবং ধর্মপালনে হস্তক্ষেপ করে না। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কোনো ব্যক্তি কে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা, পেশিশক্তির প্রদর্শন বা অস্ত্রের মুখে কোনো ইসলামের জয়ধ্বনি (নারা/স্লোগান) দিতে বাধ্য করে না।

বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী, মজলুম জনগোষ্টির মুক্তির কান্ডারী, অধিকার হারা অগুন্তি মানুষের অধিকার দাতা, বিশ্বজাহানের নবি, খোদা তায়ালার প্রিয়তম হাবিব, হযরত মুহাম্মদ (দরূদ) কে মহান আল্লাহ তায়ালা পুরো মানব সমাজের জন্য প্রেরণ করেছেন, এ ব্যা বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে

  • و ما أرسلناك الأكافة للناس بشيرا ونذيرا و لكن أكثر الناس لا يعلمون

অর্থাৎ: আর আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সমস্ত মানবজাতির জন্য সুসংবাদ দাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে, কিন্তু অধিকাংশ লোকই তা সম্পর্কে না ওয়াকিবহাল।(2)
ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা মানুষে-মানুষে সব ধরণের বৈষম্য দূর করে সাম্য প্রতিষ্ঠা করেছে। বনি আদম(3) কে সাম্যের চাঁদরে আবৃত করেছে।
ইসলাম ফোবিয়া: Islam Phobia, ইসলামের প্রতি মানবসৃষ্ট মেকি
ভয়। তথাকথিত সুশীল, পশ্চীমা, নাস্তিকদের তেরী করা এক যোজুঁর ভয় । তৃতীয় বিশ্বে মহামারির মতো তরতর করে বাড়তে থাকা ‘ইসলাম ফোবিয়ার’ পেছনে একটি বিশাল ষড়যন্ত্র জড়িয়ে আছে। আমাদের গবেষণায়

তিনটি কারণ খোঁজে পেয়েছি, যেগুলো-

ক) বিশ্বনেতৃত্বে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ইসলাম ষোলোকলায় পরিপূর্ণ

খ) মজলুম শ্রেণির প্রতি, বঞ্চিতের প্রতি ইসলামের সদয় দৃষ্টি উদারতা এবং মহানুভবতা,

গ) ইসলামের নির্ভুল অনুশাসন,

উপযুক্ত গবেষণালব্ধ কারণসমূহের সাথে মেলবন্ধন স্থাপনে আমরা উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি: রাসুলে আকরম (দরূদ) কে তদানীন্তন মক্কার কাফির শাসক গোষ্ঠী মেনে না নেয়ার পেছনে সবচেয়ে বড়ো কারণ হলো- ক্ষমতা হারানোর ভয়। তারা বুঝে নিয়েছিলো, মুহাম্মদ (দরূদ)’র প্রচারিত নবধর্ম যদি তারা মেনে নেয় এবং তাঁর ধর্ম বিশ্বাস যদি আরবে (বিশ্বে) প্রচার হয়ে যায়, তাহলে আবু জাহল গং তাদের ক্ষমতা এবং প্রভাবশূণ্য হয়ে যাবে।

ঠিক একই কারণে বর্তমান সময়ে ইসলামবিরোধী সকল অপশক্তি ইসলামের বিরোদ্ধে বিশোদগার করছে ইসলামের ভয়ে। কারণ, আধুনিক বিশ্ব যেদিন প্রকৃতরূপে ইসলামের ব্যপকতা এবং যথার্থতা

বুঝতে সক্ষম হবে যেদিন সকল পরাশক্তি শক্তিহীন হয়ে পড়বে ইনশা’আল্লাহ।সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় মহানবী (দরূদ) এর অবদান এবং বাংলাদেশ পর্যালোচনা:

ভিন্নধর্মাবলম্বীর জান-মাল রক্ষা লক্ষ ইসলামে হারাম, একজন
মুসলিম অপর মুসলিম কে জুলুম করা যতোটুকু অন্যায় এবং ইসলাম সমর্থন করে না ঠিক তদ্রূপ একজন ভিন্ন মতাবলম্বী কে জুলম(4) করাও ইসলামী আইনে অন্যায় ও নিন্দনীয়। যেমন হাদিসে পাকে ইরশাদ হয়েছে।

: اتقوا دعوة المظلوم وإن كان كافراً فانه ليس دونها حجاب

প্রিয়নবি (দরূদ) ইরশাদ করেন, তোমরা অত্যাচারিতের আর্তনাদ কে ভয় করো যদ্যপি সে কাদির (ভিন্নধর্মাবলম্বী) হয়, কেনো না, মাজলুমের দোয়া এবং আল্লাহর দরবারে বিনা অন্তরায় পৌঁছে।(5)

কাউকে পেশিশক্তির জোরে ধর্মান্তরিত না করা: বর্তমান সময়ে আমারা

দেখতে পাই, তৃতীয় বিশ্বে অনেক যায়গায়, অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে বা ক্ষমতা ব্যবহার করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে, বিশেষত, পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে ‘উগ্রপন্থী হিন্দু সংগঠন’ কর্তৃক অস্ত্রের ভয় প্রদর্শনপূর্বক তাদের আরাধ্য দেবতার নামে জয়ধ্বনি করানোর ভিডিও আমরা কমবেশ সবাই দেখেছি। কিন্তু বিপরীতে ইসলামের নীতি হলো স্বাধীন ধর্মচর্চায় কোনোরূপ বাধা প্রদান করা যাবে না, এ ব্যপারে ইরশাদ হয়েছে;

لا إكراه في الدين .

ধর্মের ক্ষেত্রে কোনো বাড়াবাড়ি নেই।(6)

এভাবে হাজারো মানবাধিকার ও সম্প্রীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ ইসলামে বিদ্যমান, কিন্তু তারপরও মুসলিমদের ওপর জুলুম নির্যাতনের অন্ত নেই, মুসলিম সমাজের করুণ পরিণতির পেছনে একমাত্র কারণ অনৈক্য!

ইসলামী সমাজ আজ মূল বিচ্যুত এবং শতধাবিভক্ত, ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে এবং নেতৃত্বের স্বাদ আস্বাদনের একটিই উপায় একটি বৃহৎ ঐক্য, রব তায়ালার তাওহিদ এবং রিসালাত কে সমুন্নত রাখতে ঐক্যের উপায়ান্তর আছে বলে মনে করি না,

واطيعو الله ورسوله ولا تنازعوا فتفشلوا وتذهب ريحكم واصبروا

মহান রাব্বুল আলামীন প্রদত্ত এই ফর্মূলায়(7) পারস্পরিক বিবাদ ভুলে রাসুলে পাক (দরূদ)র মুহাব্বতে এক হওয়ার এটাই মোক্ষম সময়। নয়তো। হাজারো উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বলির পাঠা হবো আমরা, শতো অত্যাচার অপবাদ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহ কে রক্ষা করোন।…

★লিখেছেন
মুহাম্মদ আবদুল কাদের ছাকিব
খতিব: পাঠানটুলী চাট্টশ্বরাই গায়েবী মসজিদ, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম
ওস্তজ: তৈয়্যবিয়া তাহেবিয়া সুলতান মোস্তফা কমপ্লেক্স।

পাদটীকা :

(1) Wikipedia.org// সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।
(2) আল কুরআন, সূরা সাবা, ৩৪:২৮।
(3) আরবি শব্দ ‘বনি আদম’ অর্থ মানবসমাজ। পবিত্র কুরআনের ভাষায় সকল মানবজাতিকে এ নামে অভিহিত করা হয়।
(4)জুলুম; অত্যাচার। এটি ইসলামে সরাসরি হারাম।
(5)মুসনাদ আল আহমদ, হাদিস নম্বর : ১২৫৭৭.
(6)আল কুরআন, সূরা বাক্বারা, ২:২৫৬
(7)আল কুরআন,সূরা আনফাল, ৮:৪৬।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *