ড. মুহাম্মদ খলিলুর রহমান
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। মহাকাশ জলধির চলমান স্রোতের প্রধান তরঙ্গ হচ্ছে এ মানবজীবন। কাল পরিক্রমায় সৃষ্ট বিচিত্র অনেক ঘটনা প্রবাহ থেকে মানুষের কর্ম, আচরণ কথন উদ্ভাবন ও জীবনদর্শন বেশি করে সবার দৃষ্টি কাড়ে। স্থান করে নেয় কালের বুকে অক্ষয় পিরামিড রূপে। যদি হয় সে জীবনাচার ঐশী জ্ঞানের অভ্রান্ত দিশায় পরিচালিত। তাক্বওয়ার অনুরাগে উদ্দীপ্ত ও মুসলিম মিল্লাতের অনন্য কান্ডারী বিশ্বমানবতার মুক্তিদিশারী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের পালন সমৃদ্ধ। উপরন্ত আশরাফুল আলায়হি অনুপম নির্ঝরধারা নিসিক্ত মাখলুকাত বিভুষিত এ মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্যাংশ হচ্ছে সুশিক্ষা ও নৈতিকতা যা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুশিক্ষা ও নৈতিকতার বলেই তাবৎ পৃথিবীর মাটির মানুষগুলো স্বর্ণ কিংবা হিরক থেকেও দামী হয়ে বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিগণের তালিকায় শীর্ষদেশে উন্নীত হয়েছেন।
শিক্ষার প্রকৃত শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ “শাস” ধাতু স্বরূপ
থেকে, যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দান করা। ইংরেজী পরিভাষায় Education শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Educareev Educatum থেকে এসেছে, যার অভিধানিক অর্থ হচ্ছে- To lead out অর্থাৎ ভেতরের সম্ভাবনা তথা সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানো। এক কথায় মানব শিশুর শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি বিধানের নামই হচ্ছে শিক্ষা। অন্যভাবে বলা যায়, Education is a process of teaching, training and learning, especially in school or colleges or in any educational institution, to improve knowledge and develope skills..
যুগ-যুগান্তর ও কাল-কালান্তর ব্যাপী মননশীল মানুষের মেধাবী পরিচর্যায় অর্জিত জ্ঞান যখন মানবজীবন-পরিসরে সার্থকভাবে প্রয়োগ করা হয় তখন তাকে বলা হয় শিক্ষা। এটা মূলত: এক ধরণের আলো, যার সংস্পর্শে মানুষের অজ্ঞতা, অনভিজ্ঞতা, মনের অন্ধকার দূরীভূত হয়ে জেগে উঠে আলোকিত মনন, সক্রিয় হয় তার মেধার জগত, শুরু হয় বৃহৎ পৃথিবীতে তার সার্থক পরিভ্রমণ। শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা, শক্তি ও মেধাকে বিকশিত করে, করে প্রস্ফুটিত। মানুষের উদ্ভাবন ক্ষমতা ও সৃজনশীলতাকে উদ্বুদ্ধ করে।
নৈতিকতার স্বরূপ
নৈতিকতা একটি ইতিবাচক প্রত্যয় যার। জীবনে সর্বাধিক অনুভূত হচ্ছে। ইংরেজী ‘Ethics’ ‘Morality’ শব্দের বাংলা পরিষদ নৈতিকতা। সুতরাং আমাদের দেহ ও আত্মার সমভ্য সুগঠিত ও মানবাত্মার উন্নয়ন ও উৎকর্ষ করণে শিক্ষা। নৈতিকতা এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করে। এ ব্যাপা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ Newman এর বক্তব্য প্রণিধান যোগ তার মতে: Education gives a man cl judgments, a truth developing them? eloquence in expressing them and force i using them. এ ব্যাপারে তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেয় জুলিয়াস নাইয়্যার এর বক্তব্যে বিষয়টি আরো সুন্দরতাদে পরিস্ফুটিত হয়েছে। তিনি ১৯৭৪ সালে আন্তর্জাতিক কেউ কনফারেন্সে এক পর্যায়ে শিক্ষার বিষয়ে উদাত্ত ভাষায় বলেন: Therefore it often compared to ligh which removes the darkness of ignorance and help us distinguish between right and wrong. প্রয়োজনীয়তা
নৈতিকতার সংজ্ঞায় বলা যায়
Morality Means principles concerning righe and wrong or good and bad behaviour.
বৃহৎ অর্থে বলা যায়, নীতিশাস্ত্র দ্বারা নির্ধারিত মানবচেতনা ও আচরণগুলোই নৈতিকতার মূল কথা। নৈতিকতা হচ্ছে প্রথমত চেতনাগত বিষয় এবং দ্বিতীয়ত তা আচরণিক বহিঃপ্রকাশ যা সামাজিক জীবনে মানুষ পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রমাণ করে থাকে। যা কিছু ভালো এব মানুষ ও সমাজের জন্য বরাবরই কল্যাণকর তার নিশ্চয়তা নৈতিকতার মাঝে নিহিত।
এটা অনস্বীকার্য সত্য যে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ, অথচ সদ্য ভূমিষ্ট একটি মানব সন্তানের অবস্থা চরম নাচার। সবে মাত্র ডিমের খোসা বিমুক্ত মোরগ ছানা ও চলতে- ফেরতে এবং নিজে আহার যোগাড় করতে সক্ষম। কিন্তু মানব শিশু এক্ষেত্রে মোরগ ছানার চেয়েও দুর্বল। নেই তার অর্থপূর্ণ বাকশক্তি, চলৎ শক্তি, নেই জানা শোনার জ্ঞান। এ ব্যাপারে আল কুরআনের ভাষ্য হচ্ছে:
يريد الله أن يخفف عنكم وخلق الانسان ضعيفا
অনুবাদ, আল্লাহ তোমাদের বোঝা লাগব করতে চান কেননা মানবজাতি সৃষ্টিগতভাবেই দুর্বল।” করতে চান,
মানবজাতির অতিশয় দূর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ পাক আরো বলেন-
والله أخرجكم من الالوان المعليكم لا تعلمون شيا وجعل لكم …السمع والأبصر والأقادة لعلكم تشكرون অনুবাদ- তোমাদেরকে কিছু না জানা অবস্থায় আল্লাহ তোমাদের মাতৃ উদ্দর থেকে ভূমিষ্ট করেছেন, আর দিয়েছেন তোমাদের চক্ষু, কর্ণ ও অন্তর। যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।
এরূপ অসহায় অবস্থা থেকে উত্তোরণে মানুষকে দেয়া হয়েছে তিনটি সেরা ইন্দ্রীয়জ শক্তি- চক্ষু, কর্ণ ও অন্তর। মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্বের মানদন্ড “জ্ঞান বা শিক্ষা” উক্ত ত্রি- শক্তি দ্বারাই উপার্জিত হয়। পরবর্তীতে এ অর্জিত জ্ঞানই মানুষকে বীজ থেকে বনস্পতির আত্মপ্রকাশের ন্যায় চরম অসহায় অবস্থা থেকে শ্রেষ্ঠত্বের পরম সোপানে উপনীত করণে অদ্বিতীয় ভূমিকা রাখে।
মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্বের চাবিকাঠি হচ্ছে জ্ঞান
- নিখিল বিশ্বের অপরাপর সৃষ্টি জীবের উপর মানব জাতির প্রাধান্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব লাভের নেপথ্যে নিহিত মানুষের
শিক্ষা অর্জিত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা। শিক্ষার অজেয় শক্তি দ্বারাই মানুষ পশু-পাখি, দৈত্য-দানব ও অনল পবন, পানি-পর্বত এক কথায় ভূ’ম থেকে ব্যোমে সর্বত্রে সকলে কর্তৃত্ব চালাচ্ছে অনায়াসে। গহীন বনের হিংস্র পশুকেও মানুষ ধরে এনে খাঁচা বন্দী করে জ্ঞানের কারিশমায় বৈশ্যতা করতে সক্ষম, তার উপরও রয়েছে মানুষের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। দিয়াশলাইয়ের একটি শলাকাকে বাক্সে বন্দী করে প্রয়োজনে জ্বালিয়ে ও নিভিয়ে তার থেকে খেদমত আদায় করে নিচ্ছে মানুষ।
প্রবল গতিমান পবন বেগ-যার আক্রমণে বাড়ী-ঘর, গাছ- পালা, দালান-কোটা মুহুর্তে ভুলুষ্ঠিত হয়ে পড়ে উদ্যান ও শশ্মানে পরিণত হয়, সেরূপ পরাক্রমশালী অদৃশ্য সমীরণকে মানুষ জ্ঞানের কলা-কৌশলে ধরে এনে গাড়ীর চাকাতে আবন্ধ করে তার পীঠে আরোহণ করে পাড়ি দিচ্ছে দূর- দূরান্তে-ইন্সিত লক্ষ্য-অভিলক্ষ্যে। রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফোন ও মোবাইল ইত্যাদিতে ছবি ও সংবাদ প্রেরণ মানুষ বাহক রূপে ব্যবহার করছে বায়ুকে জ্ঞানের বদৌলতে। এমনি ভাবে পানির উপর ও রয়েছে মানুষের অপার কর্তৃত্ব। পানির ধর্ম হচ্ছে উপর থেকে নিচের দিকে ধাবিত হওয়া। কিন্তু মানুষ নিজ প্রয়োজনে পানিকে মাটির দ্বারা টেনে সু-উচ্চ বিল্ডিং এর চূড়ায় তুলে, সুইচের মাথায় স্থির রেখে প্রয়োজনানুসারে সুইচ টিপে ব্যবহার করে আবার নীচে ছেড়ে দিচ্ছে। শীতলতা পানির অন্যতম আরেকটি
বৈশিষ্ট্য। তাতেও জ্ঞান দ্বারা মানুষ প্রভাব খাটিয়ে শীতল পানিকে আগুনে উত্তপ্ত করে প্রয়োজনে ব্যবহার ফুটায়ে উত্তপ্ত করে গরম পানিরূপে জাগানিয়া গর্জনশীলা, তরঙ্গ-বিক্ষুদ্ধ মহা-সাগরের বুক চিরে a মনথন করে হীরা, জহরত, মৎস্য প্রভৃতি ধন-সম্পদ আহরণ করে নিজেদের আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করছে শক্তির জোরে। মানুষের এ কর্তৃত্ব কেবল মাত্র ভূপৃষ্ঠে সীমাবদ্ধ নয়। ভূতল ছেড়ে অন্তরীক্ষেও ব্যাপৃত। মানুষ রকেটে উঠে চন্দ্র জয় করল-অগণিত নব নব গ্রহ, নক্ষত্র ও ছায়া পথের সন্ধান দিল মানুষের জ্ঞান। তাছাড়া মহাশূণ্য বিজয় অভিযানে এখনো রয়েছে মানুষ অব্যাহত। অদূর ভবিষ্যতে মহাশূণ্যের নব বিষয়ের দ্বার উন্মোচনে মানুষের প্রচেষ্টা সদা তৎপর। সুতরাং দেখা যায়, নভে-ভবে সমান্তারালে চলছে মানুষের আধিপত্য যার মূলে রয়েছে মানুষের শিক্ষা অর্জিত জ্ঞান।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে আল্লাহ পাক মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরেছেন এভাবে
ولقد كرمنا بني ادم وحملتهم في البر والبحر ورزقنهم من الطيبت وفضلنهم على كثير ممن خلقنا تفضيللا অনুবাদ- আমি মানব জাতিকে সম্মানিত করেছি এবং জলেস্থলে তাদেরকে প্রতিষ্ঠা করেছি। আর তাদের জীবিকা স্বরূপ দিয়েছি পুত পবিত্র খাদ্য। পরন্তু আমার বহু সৃষ্টি জগতের উপর তাদেরকে দিয়েছি শ্রেষ্ঠত্ব।”
মানব জাতির এ শ্রেষ্ঠত্ব যা ফিরিস্তাদের উপর প্রযোজ্যতা কেবল মাত্র একটি গুণ অর্থাৎ জ্ঞানের কারণে। আল্লাহ পাক বিশ্বের সমুদয় বস্তু ফিরিস্তাদের সম্মুখে পেশ করে সেগুলোর নাম বলে দেয়ার জন্য তাদের কে নির্দেশ করলে তারা অজ্ঞতা ও অক্ষমতার কথা সবিনয়ে প্রকাশ করেন।- পক্ষান্তরে আদম আলায়হিস্ সালামকে উক্ত বিষয় সমূহের নাম বলার আদেশ করলে তিনি সুস্পষ্টভাবে সমুদয় বস্তুর নাম বলে দেন। ফলে জ্ঞানের দৌড়ে হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম ফিরিস্তাদের থেকে অনেক দূর এগিয়ে যান। ফলশ্রুতিতে মহান আল্লাহ ফিরিস্তাদের প্রতি হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম কে সম্মান সূচক সিজদার নির্দেশ দিয়ে আদম আলায়হিস্ সালাম এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। এতো সম্মান ও শিক্ষাগুরুর ধারক হওয়া সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে রয়েছে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি, ভুল-ভ্রান্তি, যেমন থাকে হাসির উল্টো পিঠে কান্না, দিনের অপর পিঠে রাত। এখন আমরা এর কারণ নির্ণয়ে মনোনিবেশ করবো।মানব প্রকৃতি ও শিক্ষার প্রকারভেদ
দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে মানব প্রকৃতি। এতদুভয়ের মধ্যে প্রযোজ্য অন্বয় রক্ষা করে মানব জীবন পরিচালিত হলে সে জীবন হয় মহৎ অমর ও অক্ষয়। সুতরাং দুই বিপরীত মুখী বস্তুকে নিজ নিজ সরল রেখায় পরিচালিত করার জন্য প্রয়োজন দুই ধরনের জ্ঞান। এ নিরিখে বিখ্যাত মুসলিম মনীষী ইমাম শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলায়হি জ্ঞানের প্রকরণকে দুই ভাগে বিভক্ত করে বলেন, ইলম বা জ্ঞান দুই প্রকার। এক, জীবন ধারণের জন্য বস্তুগত জ্ঞান, দুই, ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান।
এক. বস্তুগত জ্ঞান
জীবন সচল রাখতে হলে জীবিকার প্রয়োজন দেহের সুস্থতা দরকার, তাই জীবিকা আহরণ, নানা রোগ-ব্যাধি, বিপদ- আপদ ইত্যাদি প্রতিকূল পরিবেশে থেকে দেহ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা-জ্ঞান, কলা-কৌশল অর্জন অত্যাবশ্যক। অঢেল ধন-সম্পদ ও বিপুল যশ-খ্যাতি অর্জনের মোহ, পরস্পরের উপর প্রাধান্য বিস্তারের সাধ এবং রোমাঞ্চকর নব আবিষ্কারের দূর্বার উদ্দীপনা প্রতিনিয়ত তাড়িত করছে অনুসন্ধিৎসু মানব মনকে নতুন জ্ঞানে দ্বার উন্মোচন করতে। ফলে বস্তুগত জ্ঞানের পরিধি ও দিনের পর দিন বিশাল আকারে সম্প্রসারিত হচ্ছে। জ্যোতি বিদ্যা, রসায়ন, পদার্থ, দর্শন ইত্যাদি বিষয়সহ আরো কত অগণিত বিষয়ে মানুষের জ্ঞান আজ সাফল্যের সানুদেশে অবস্থান করছে। এসব বস্তুগত জ্ঞান মানুষের জাগতিক জীবনের সমৃদ্ধিতে গতি সঞ্চার করে চলছে। কিন্তু আত্মার উন্নতি ও নীতি- নৈতিকতার প্রসারে এর ভূমিকা গৌণ।
দুই. ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান
এটা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত ঐশী জ্ঞান ও শিক্ষা। এ শিক্ষার অনাবিল পরশে আত্মার সুকুমার পাপড়ী গুলো বিকশিত হয়। ফলে সততা, ন্যায় পরায়ণতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, সাম্য ইত্যাদি মানবীয় সৎ গুণাবলীর রূপচ্ছটায় মানব জীবন উদ্দীপ্ত হয়। অনৈতিক, অমূলক ও মানবতা বিবর্জিত আচরণ থেকে আলোকিত জীবন সৌধ রচনায় মানুষ অনুপ্রাণিত হয়। কারণ এ শিক্ষার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানুষের হৃদয় থেকে মহান স্রষ্টার প্রেম ও ভয় জাগরুক রেখে আল্লাহর নিরুপিত বিধি-নিষেধ মান্য করে জীবন চলার নির্দেশিকা দেয়া পরকালে আল্লাহর কাছে প্রতিটি কাজের জবাব দিহিতার কথা মানুষের মর্মে সঞ্চার করা। এর ফলে পরিশীলিত ও আদর্শ পূর্ণ জীবন বিনির্মাণে সকল সুন্দর ও নৈতিক গুণাবলি অনুসরণ ও অনুকরণে মানুষ থাকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
বস্তুগত ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রভাব ও বৈশিষ্ট
প্রতিটি বস্তুর কতিপয় স্বকীয় বৈশিষ্ট্য থাকে-যা অন্য যেতে পৃথক বিশেষত্ব শুণে আলাদা করে রাখে। এক বস্তুর বৈশিয়া অন্য বস্তুতে পাওয়া যায় না বলে প্রত্যেক বন্ধ স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবিকল্প অপরিহার্য্য। যেমন। তৃষ্ণা নিবারণ, শীতলতা প্রদাম পানির বৈশিষ্ট্য। আগুন থেকে এ বৈশিষ্ট্য আশা করা যা না। আবার দহন করা ও তাপ ছড়ানো আগুনের বৈনিম্ন। তা পানির মধ্যে অন্বেষণ করা মুর্খতার পরিচয়। তাদশ বস্তুগত ও ধর্মীয় শিক্ষা উভয়ের স্বকীয় কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা মানব জীবনের জন্য আবশ্যক ও গুরুত্ববহ।
দৃশ্যমান এ জগতে ও তথায় হাজারো প্রকারের বিষয় বস্তু হচ্ছে এ শিক্ষার আলোচ্য বিষয়। এসব বস্তুসমূহের গুণগত বৈশিষ্ট্য উপকার-অপকার ইত্যাদি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। হয়ে তা থেকে উপকৃত হওয়ার মাধ্যমে জাগতিক সাফল্য ও উন্নতি লাভের রূপরেখা প্রদান হচ্ছে এ শিক্ষার প্রধান বৈশিষ্ট্য। আত্মা ও নৈতিকতার উন্নয়নে এ শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনরূপ নির্দেশিকা না থাকায় ঐ সবের উন্নয়ন প্রভার ও নেহায়ত অপ্রতুল। উদাহরণত: বলা যায় যে, বস্তুগত শিক্ষার অন্যতম শাখা চিকিৎসা বিজ্ঞান দ্বারা জটিল ও কঠিন রোগ আরোগ্য করা যায়। কিন্তু এর দ্বারা মানুষের আচরণের পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়। তাই কোন চোর, ডাকাত কিংবা মিথ্যাবাদীর স্বভাব পরিবর্তনের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে কোন প্রকার প্রতিষেধক নেই। কাজেই এরূপ বলাটা যথার্থ হবে না যে, অমুক ট্যাবলেট খেয়ে চোর চৌর্যবৃত্তি পরিত্যাগ করবে, মিথ্যুক মিথ্যা বলা পরিহার করবে, ডাকাত ছিনতাই ছেড়ে দিয়ে মহৎ মানুষে পরিণত হবে। যেহেতু এগুলো উত্ত বিদ্যার প্রভাবাধীন বিষয় নয়, তাই এ বিদ্যা থেকে এরূপ বিষয়ের সমাধান আশা করা ও অবাস্তব।
মানুষের আচরণগত পরিবর্তনের জন্য মানসিক প্রবৃত্তির উপর কূলব বা আত্মার প্রাধান্য প্রয়োজন। এর জন্য অপরিহার্য ধর্মীয় শিক্ষা। কারণ এর দ্বারা কূলব বা আত্মার প্রাণ সঞ্চারিত হয়। তাই কোন মুসলিম মনীষীর উক্তি হচ্ছেঃ “আত্মা মৃত এর জীবন শক্তি হচ্ছে ধর্মীয় ‘ইলম। আবার ‘ইলম ও মৃত, তার প্রাণ শক্তি নিহিত চর্চায় ও পর্যালোচনায়।
সুতরাং বলা যায় ধর্মীয় শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমেই মানবাত্মাকে সবল ও সক্রিয় করে তুলে নীতি-নৈতিকতার লালন ও বিস্তারের পথ সুগম করা যায়। কারণ এ শিক্ষার অন্তর্নিহিত আলোক রশ্মির ঔজ্জ্বল্যে নীতি-দুর্নীতি, সত্য- মিথ্যা সব কিছু সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়। ফলে মানুষ অনায়াসে সুন্দর ও সত্যকে চিনে নিয়ে তদানুসারে কর্ম রচনায় সচেষ্ট হয়।
রাসুলুল্লাহর যুগান্তরকারী বাণী ✓ স্কুলম হচ্ছে কর্মের পথ নির্দেশক, কর্ম ইলমেরই অনুবর্তী
উহয়। জ্ঞান থেকে কর্ম আর কর্ম থেকে সুনীতি বা দুর্নীতি হক্টরে আসে। ব্যাপক অর্থে অন্যান্য কর্মের উৎস সাধারণ জাম হলেও বিশেষ অর্থে সৎ কর্মের উৎস হচ্ছে ধর্মীয় ‘ইলম দিক আনের পিছু ছুটার কারণে বৈশারদর্শন করে কেবা আধুনিক জনের ওটার ক্যাবলে বৈষয়িক মানুষের প্রাবল্য অর্জিত হলেও নৈতিক মূল্যবোধের বেলায় মানুষ নিম রসাতলে নিপতিত। আমাদের প্রাত্যহিক জীবন যাত্রার সিমহর্ষক চিত্র ও গোটা বিশ্বের অরাজকতা পূর্ণ দৃশ্যপট এর প্রজ্বল প্রমাণ। তাই কর্মের সাথে ন্যায়-নীতি ও সৌন্দর্য্যবোধের সংশ্লিষ্টতার লক্ষ্যে আধুনিক জ্ঞানের সাথে মোয় শিক্ষার সম্পৃক্ততা অপরিহার্য। কারণ জ্ঞানের এ দ্বিবিধ মাথার স্বার্থক সমন্বয়ের মাধ্যমে মানব জীবনের রওনক বৃদ্ধি পায়। পরন্তু ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে এমন অলৌকিক ও আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলীয়ান করে যার কাছে আধুনিক প্রযুক্তিগত শক্তিও হার মানে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায় যে, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু মদীনার মসজিদে নববীতে দাড়িয়ে “ইয়া মারিয়াতাল জাবাল” বলে মদীনা মুনাওয়ারা থেকে শত যোজন দূরত্বে অবস্থিত আফ্রিকার পার্বত্য অঞ্চলে যুদ্ধরত মুসলিম সিপাহ সালা’র কাছে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংবাদ শাঠিয়ে ছিলেন। এ ঘটনার কিছুদিন পর হযরত সারিয়ার দূত একটি চিঠি নিয়ে আসল যার মধ্যে লিখা ছিল যে, আমরা জুমার দিনে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি এবং আমাদের পরাজয় নিশ্চিত ছিল। এমনি অবস্থায় ঠিক জুমার ياسارية الجبل দিকে গিয়ে বীর বিক্রমে-প্রাণপণেযুদ্ধ করি। ফলে কাফিররা
রাশায়ী ও মারাত্মকভাবে পরাজয় বরণ করে এবং আমরা সসম্মানে বিজয়ের মুকুট পরিধান করি। অথচ তখন টেলিফোন, মোবাইল তো ছিলইনা তার কল্পনা ও মানুষের চিন্তাই ছিলনা। কেবল আধ্যাত্মিক শক্তির অনুবলেই তিনি এ সংবাদ মুসলিম সেনাপতির নিকট প্রেরণে সক্ষম
হয়েছিলেন। অতএব এটা বলা অত্যুক্তি হবে না যে ধর্মীয় শিক্ষা শুধু নৈতিকতা সৃষ্টি করে না। আধুনিক জ্ঞানের কার্যকর ভূমিকাও পালন করে থাকে। তাই এ শিক্ষার অবারিতদ্বারে অনুপ্রবেশে সবার সদিচ্ছা থাকা উচিত। তবেই একজন প্রকৃত শিক্ষার্থী তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ যোগ্যতা, দক্ষতা ও অতি পরিবর্তন সাধন পূর্বত যথাযথ ব্যক্তি সমাজ ও জাতির প্রভূত উন্নয়নে অবিশ্বাস্যন অবদান রাখতে সক্ষম হবেয়াতি
পরিশেষে বলা যায়, জীবনের অচলায়তন এবং অপ্রস্ফুটিত বোধ ও বোধিকে উম্মোচন করার ক্ষেত্রে সুশিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা মানুষকে জ্ঞান সমুদ্রের সন্ধান দেয়। তামাম পৃথিবীর চির স্মরণীয়-বরণীয় আনী-গুণি ও মনীষীবৃন্দ এক বাক্যে স্বীকার করেছেন যে, মানুষ বর্তমানে যে অবস্থানে উপনীত, জ্ঞান-গরিমায় অর্জন করেছে মর্যাদার সর্বোচ্চাসন, তার পেছনে রয়েছে সুশিক্ষা ও নৈতিকতার পরম অবদান। তাই বলা যায়, নৈতিকতার বলে অভিজ্ঞতা ও মেধার কলাকৌশল প্রয়োগে যে জাতি যত সফল, রাষ্ট্রীয় প্রাগ্রসরতায় সে জাতি ততই সমৃদ্ধ। তথ্যসূত্র
০১ . শামসুদ্দীন শিশির, দৈনিক আজাদী, ২৫ শে নভেম্বর ২০০৯ইং, পৃ.৬
২. AS lionby, Oxford Advanced Learner’s Dictionary (London: Oxford University Press, New Edition.
২০০২) ১, ৪০১
০৩. AS Hornby, Ibid, AS Hornby, Ibi, AS Hornby, Ibid 8.
AS Hornby, Ibid, P. 310
৫. Prof. Md. Nazrul, Communicative English for HS.C Course of NCTB, (Dhaka: Taranga Publication, 2001)
ob. AS Hornby, Ibid, P. 427, AS Hornby, Ibid, P. 826
০৭. AS Hornby, Ibid, আলকুর’আন, সূরা ৪ (আন নিসা)। ২৮
০৮. আলকুর’আন, সূরা ১৬ (আন নাহাল) ৭৮
০৯. আলকুর’আন, সূরা ১৭ (বনী ইসরাঈল)। ৭০
১০. আলকুর’আন, সূরা ২ (আল বাক্বারা)। ৩২
১১. ১২ . আলকুর’আন, সূরা ২ (আল বাক্বারা)। ৩১