কাদিয়ানী মতবাদ কুফুরী মতবাদ

মাওলানা মুহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দীন

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه سيكون في امتي كذابون ثلكون كلهم يزعم أنه نبي الله وأنا خاتم النبيين لا نبي بعدي

অনুবাদ:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, খুব শিগগিরই আমার উম্মতের মধ্যে ৩০ জন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর নবী বলে ধারণা করবে। অথচ আমিই শেষ নবী আমার পরে কোন (নতুন) নবী নেই (মুসলিম শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, ডিরমিযি শরীফ, মিশকাত শরীফ (৪৬৫ পৃষ্ঠা।

প্রাযঙ্গিক আলোচনা

মহান আল্লাহ্ পাক রবস্তুল আলামীন যুগে যুগে মানব জাতির হিদায়াতের জন্য যত নবী-রাসূল পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হলেন-আমাদের প্রিয় নবী সমস্ত নবীদের প্রধান। সমগ্র সৃষ্টির মূল উৎস রাহমাতুল্লিল আলামীন হুযুর মুহাম্মদুর রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। তিনি খাতামুন নাবীয়্যীন। তাঁর আগমনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ নবুয়তের ধারাবাহিকতা সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করেন। তাঁর পরে আর কোন নবী-রাসূল আসার প্রয়োজনও নেই। কারণ তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় ধর্মের পরিপূর্ণতা দান করেছেন। খতমে নবুয়্যুতের এই আক্বিদা পোষণ করা প্রতিটি ঈমানদারের জন্য অপরিহার্য। তাই কেউ যদি নবী-রাসূল দাবি করে কিংবা কেউ যদি খতমে নবুয়্যতের আক্বিদাকে অস্বীকার করে তবে সে মিথ্যাবাদী ও কাফির। পবিত্র কুরআন-হাদীস, ইজমা-কিয়াস তথা ইসলামী শরিয়তের দলীল চতুষ্টয় দ্বারা এ আক্বিদা প্রমাণিত। এমনকি পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহেও এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-

ما كان محمد ابا احد من رجالكم ولكن رسول الله وخاتم النبين وكان الله بكل شيء عليما

অর্থাৎ- মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ। সূরা আহযাব।

এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাফসীরে দুররে মনসূর গ্রন্থে আবৃন্দ ইবনে হুমায়দ রহমাতুল্লাহি আলায়হির সূত্রে বর্ণনা করেন-

في قوله تعالي وخاتم عن الحسن رضي الله تعالي عنه في ختم الله النبيين بمحمد صلي الله عليه وسلم النبيين قال . وكان آخر بعث

অর্থাৎ হযরত হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে খাতামুন নবীর‍্যীন’র ব্যাখ্যায় বর্ণিত আছে। তিনি বলেন আল্লাহ তা’আলা নবীগণের সিলসিলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র মাধ্যমে সমাপ্ত করেছেন। তিনি সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাফসীরে খাযিন-এ রয়েছে-خاتم النبين ختم الله النبوة فلا بعده أي ولا معه

অর্থাৎ ‘খাতামুন নবীয়‍্যীন’ অর্থ আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে নবুয়াতের ধারা সমাপ্ত করে দিয়েছেন। সুতরাং তাঁর পরে নবী আসার সিলসিলা পরম্পরা জারি থাকতে পারে না।

এভাবে খতমে নবুয়্যত বিষয়টি পবিত্র কুরআনের শতাধিক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যে শেষ নবী সে বিষয়টি অসংখ্যা হাদীস, ইজমা এবং কিয়াস দ্বারাও প্রমাণিত।

হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে হুযূর নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন। বনী ইসরাঈলের নবীগণ তাদের জাতির উপর নেতৃত্ব দিতেন যখনই কোন নবী ইন্তেকাল করতেন তখনই পরবর্তী নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন। কিন্তু আমার পর আর কোন নবী আসবে না।

أنا خاتم النبيين لا نبي بعدي (আমিই শেষ নবী, আমার পর কোন নবী নেই) ঐতিহাসিক বিদায় হজ্বের ভাষণেও নবী করীম সাল্লাল্লাহুল তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন- তে লোকসকল। আমার পর আর কোন নবী আগমন করবে না অতএব, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে, রমযান মাসের রেখা রাখবে, সন্তুষ্টচিত্তে নিজেদের মালের যাকাত আদায় করবে। তোমাদের ধর্মীয় নির্দেশকদের আদেশ মান্য করবে। তাহলে তোমরা তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর অসংখ্য অকাট্য দলীল প্রমাণাদি দ্বারা প্রমাণিত খতমে নবুয়াতকে যদি অস্বীকার করে কিংবা নতুন করে কেউ নবী দাবি করে তবে সে হবে মিথ্যাবাদী ও কাফির। আলোচ্য হাদীসের মূল বিষয় বস্তু এটাই।

রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পর আরবের কতিপয় লোক নবুয়ত দাবি করে বসেছিল। তাদের উত্থানের সাথে সাথে তৎকালীন শাসক প্রিয় নবীজির যোগ্যতম উত্তরসুরি ও ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কঠোর হস্তে তাদের দমন করে ইসলাম ও মুসলমানদের এক মহাসংকট থেকে উদ্ধার করেন।

মুসায়লামাতুল কায্যাব, আসওয়াদ আনাসী, সাজাসহ আরো কতিপয় ভণ্ডনবীর আবির্ভাব হয়েছিল। তাদের আত্মপ্রকাশের অনেক পূর্বেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এদের ব্যাপারে অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজনন্মকে সতর্ক করেছিলেন যা তাঁর ইলমে গায়বের সাক্ষ্য বহন করে। পরবর্তীতে তাঁর ইনতেকালের পর সাহাবাদের মধ্যে ইজমাও প্রতিষ্ঠিত হয় খতমে নবুয়ত বিষয়ে। তাই সাহাবায়ে কেরাম সম্মিলিত ভাবে ভণ্ডনবী মুসায়লামাকে কাফির ফতোয়া দেন এবং হযরত সিদ্দিকে আকবরের নির্দেশে নব সিপাহশালার হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে আনসার ও মুজাহিদ সাহাবীগণের এক বিশাল বাহিনী মুসায়লামার বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে পরাজিত করে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেন।

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহ কঠোর হস্তে তৎকালীন ভণ্ডনবীদেরকে দমন করলেও পরবর্তীতে কতিপয় ভণ্ডনবী মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়। নবী পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন-

سيكون في امتي كذابون ثلثون

অর্থাৎ অচিরেই আমার উম্মতের মধ্য হতে ৩০জন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে। রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পরবর্তী সাহাবী, তাবেঈ, তাবেঈ তাবেঈগণের যুগ পেরিয়ে যুগ যুগান্তরে আত্মা কাশ

করতে থাকে ওই সমস্ত চণ্ডনবী যাদেরকে সমসাময়িক হক্কানী ওলামায়ে কেরাম কাফির মুরতাদ। ফতোয়া দিশে। ও হতভাগা কতিপয় লোক ওই সমস্ত ভণ্ডনবীর ধোঁকায় পতিত হয়ে নিজেদের ঈমান আমল সর্বনাশ করেছে। বর্তমান বিশ্বর সর্বনাশা ফিৎনা কাদিয়ানী ফিৎনা

ইতিহাসে যে সব ভন্ডনবীর নাম পাওয়া যায় তাদের মধ্যে সর্বশেষ ভণ্ডনবীয় নাম মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার প্রবর্তিত মতবাদের নাম কাদিয়ানী মতবাদ বর্তমাদ বিশ্বে বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে এ মতবাদ আছ বিষফোড়ার আকার ধারণ করেছে। এদের চাকচিকোর গোলক ধাঁধায় পতিত হয়ে অনেক সরলমনা মুসলমান ঈমান হারা হয়েছে ইতোমধ্যে। মুসলিম বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রে ইতোমধ্যে এদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের দেশে বারবার এদেরকে অমুসলিম ঘোষণার দাবীতে বিভিন্ন মহলের পক্ষ হতে ওঠলেও কোন সরকারই এদিকে কর্ণপাত করছে না যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রিয় নবীর শান-মান নিয়ে এরা খেল-তামাশা করবে আর নবী প্রেমিকরা তা নিরবে সহ্য করবে তা হতে পারে না। কাদিয়ানীদের আকিদা যে কত মারাত্মক তা আমরা অনেকেই জানিনা। আমাদের প্রিয় নবীকে শেষ নবী হিসেবে স্বীকার না করা ছাড়াও অনেক ভ্রান্ত আক্বিদার কয়েকটি বিশ্বাসের নমুনা পাঠক সমীপে তুলে ধরার প্রয়াস। পাচ্ছি যা মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার বিভিন্ন বই পুস্তুকে লিপিবদ্ধ করেছে।

আমি তো সুসংবাদের ভিত্তিতে এসেছি, ঈসা কোথায় যে আমার মিম্বরে পা রাখবে। (ইমালায়ে আওহাম-১৫৮ পৃষ্ঠা। * আমার ভ্রমণ কারবালায় হয়। একশত হুসাইন আমার

পকেটে আছে। দূিররে সমীন- ১৭১ পৃষ্ঠা * আমি মসীহে যমানা, আমি কালিমুল্লাহ্, আমি মুহাম্মদ ও আহমদ মোজতব্য। তিবইয়ানুল কুলুব- ৩য় পৃষ্ঠা।

  • আমার আগমনে সকল নবী, জীবিত হয়ে গেছেন, সকল রাসূল আমার জামায় লুকায়িত। দূররে সামীন- ১৭৩)

এভাবে আরো বহু ভ্রান্ত আক্বিদা রয়েছে স্বল্প পরিসরে আলোচনা সম্ভব নয়। তবে এতটুকু বলতে হয় তারা আলাদা নবী আলাদা কুরআন তৈরি করে নিয়েছে। তাদের আলাদা কুরআনের নাম ‘তাযকিরা’ নাউযু বিল্লাহ। এক কথায় এরা ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন এরা ইহুদি নাসারার সৃষ্ট, এরা মুরতাদ, এরা কাফির। এদেরকে রাষ্ট্রিয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা আজ সময়ের দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *