বায়আত ও পীর- মুরীদী

অধ্যক্ষ হাফেজ কাজী মুহাম্মদ আব্দুল আলীম রিজভী

বায়আত ইসলামী পরিভাষা। এটা সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এর সুন্নাত। তাবেয়ীন, তাবয়ে তাবেয়ীনসহ সালফে ছালেহীন এর সমাদৃত ও অনুসৃত পন্থা। অলীকুল সম্রাট মাহবুবে ডুবহানী, কুতুবে রব্বানী সাইয়্যেদুনা শায়খ সৈয়াদ সুলতান মীর মুহীউদ্দীন আবু মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নামে নামকরণকৃত কাদেরিয়া সিলসিলা, গরীবে নওয়াজ, বান্দা নওয়াজ খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নামে চিন্তীয়া ত্বরীকা, ইমামূল আউলিয়া বাহাউদ্দিন নক্শবন্দী বুখারী রহমতুল্লাহি আলাহির নামে নকশবন্দীয়া সিলসিলা এবং ইমামুত ত্বরীকত শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলায়হির নামে সোহরাওয়ার্দীয়া সিলসিলা সহ বিভিন্ন বরহক সিলসিলার অনুসারী মুহাদ্দিসীন, মুফাচ্ছেরীন, ফুকাহায়ে কেরাম, উলামায়ে দ্বীনসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর নিকট সুবিদিত ও নির্ভরযোগ্য আত্মিক পরিশুদ্ধি ও খোদা প্রাপ্তির পদ্ধতি কামিল পীর মুর্শিদের হাতে বায়আত। এর সত্যতা, যথার্থতা ও হক্কানিয়্যতের অকাট্য ও প্রকৃষ্ট প্রমাণ পবিত্র কুরআনে করীম, হাদীছে নববী শরীফ এবং দ্বীনের মহান ইমামগণের কিতাবে বিদ্যমান। তাই এ বায়আত কে অস্বীকার বা এতে সংশয় সন্দেহ পোষণ কিংবা একে অবজ্ঞা-উপেক্ষা করার কোন রূপ অবকাশ মুমিনের জন্য নেই। নিম্নে এ প্রসঙ্গে কিঞ্চিত আলোকপাত করা হল।

পবিত্র কুরআনে করীমের ২৬ পারার সূরাহ “ফাতহ” এর দশ নম্বর আয়াতে এরশাদ হয়েছে- ان الذين يبايعونك انما يبايعون الله يد الله فوق ايديهم فمن نكث فانما ينكث على

نفسه . ومن او فى بما عاهد عليه الله فسيؤتيه اجرا عظيما.

অর্থাৎ (ওহে রাসূল (দঃ))। নিশ্চয় যারা আপনার নিকট বায়আত গ্রহণ করছে তারা তো আল্লাহরই নিকট বায়আত গ্রহণ করছে। তাদের হাতের উপর আল্লাহর হাত রয়েছে। সুতরাং যে কেউ অঙ্গীকার ভঙ্গ করে সে নিজেরই অনিষ্টার্থে অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। আর যে কেউ পূরণ করে ঐ অঙ্গীকারকে যা সে আল্লাহর সাথে করেছিলো, তবে অতি সত্বর আল্লাহ তাকে মহা পুরস্কার দেবেন। উল্লেখ থাকে যে, উপরিউক্ত আয়াতে ইসলামের ইতিহাসে সুপ্রসিদ্ধ “বায়আতে রিদ্বওয়ান” এর বর্ণনা বিবৃত হয়েছে। যা ষষ্ঠ হিজরীতে পবিত্র মক্কার নিকট হুদায়বিয়ায় কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদে অবিচল থাকার উপর গৃহীত হয়। এটা ছিল বায়আত আলাল জিহাদ।

আটাশতম পারায় সূরাহ মুমতাহিনার বার নম্বর আয়াতে এরশাদ হয়েছে-

يايها النبي اذا جاءك المومنات يبايعنك على ان لا يشركن بالله شيئا ولا يسرقن ولا يزنين ولا يقتلن اولادهن ولا ياتين ببهتان يفترين بين ايديهن وارجلهن

অনুগ্রহ, মহান আল্লাহ এবং কামিলদের মুরশিদ।’ থেকে নিসৃত এ পংক্তির এমন প্রভাব ছিল পরিবর্তে তিনি দাতা গঞ্জবখশ হিসেবে পরিচিতি। সউল্লাহ এ সাবকন্টিনেন্টে ইসলাম প্রচারে অগ্রগামী ভূমিকা ধ্যৈ তিনি অন্যতম। তাসাউফ শাস্ত্রে লিখিত কাশফুল মাহজুবই তাঁর বড় দলীল। তিনি এ কিতাবের বিভিন্ন স্থানে বর্ণনা করেছেন, ছোট বেল এর মধ্যে ‘জ্ঞান অর্জনের প্রবল ইচ্ছা কাজ করছিল। তিনি তাঁর সময়কালের বড়

ولا يعصينك فى معروف فبايعهن واستغفر لهن الله . ان الله غفور رحيم. অর্থাৎ ওহে নবী (দঃ) যখন আপনার নিকট মুমিন নারীরা হাজির হয় বায়আত গ্রহণের জন্য এ মর্মে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকেও শরীক করবে না আর তারা না চুরি করবে, না যিনা করবে, না আপন সন্তানদের কে হত্যা করবে এবং না ঐ অপবাদ তারা আনয়ন করবে যাকে আপন হাত ও পায়ের মধ্যখানে রটাবে এবং কোন সৎকর্মে আপনার নির্দেশ অমান্য করবে না তখন আপনি তাদের নিকট হতে বায়আত গ্রহণ করুন। এবং আল্লাহর নিকট তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।

তাফসীর শাস্ত্র বিশারদগণ বর্ণনা করেছেন-অষ্টম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলে আকরাম নূরে মুজাসসাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম পুরুষদের নিকট হতে ইসলাম ও জিহাদের উপর বায়আত গ্রহণের পর সাফা পর্বতের উপর নারীদের নিকট থেকে বায়আত গ্রহণ শুরু করলেন। আর সাইয়্যেদুনা ওমর ফারুকে আজম (রঃ) নীচে দাঁড়িয়ে হাবীবে খোদা (দঃ) এর মহিমান্বিত বাণী উপস্থিত নারীদের কে শুনাচ্ছিলেন। বায়আতের এ মজলিশে চারশত সাতান্ন জন মহিলা উপস্থিত ছিলেন। যাঁদের মধ্যে হযরত আবু সুফিয়ানের বিবি হিন্দা বিনতে ওতবাও ছিলেন। এটা ছিল তাকওয়া অবলম্বনের বায়আত। উপরোক্ত আয়াতে রাসূলে খোদা (দঃ) এর এ বায়আত গ্রহণের বিষয়ই বিধৃত হয়েছে।

ছহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে প্রসিদ্ধ ছাহাবীয়ে রাসুল (দঃ) সাইয়্যেদুনা ওবাদা বিন সামিত (রঃ)

থেকে বর্ণিত আছে-

وعن عبادة بن المامت الله قال قال رسول الله ﷺ وحوله عصابة من اصحابه بايعوني على ان لا تشركوا بالله شيئا ولا تسرقوا ولا تزنوا ولا تقتلوا اولادكم ولا تأتوا بهتان تفترونه بين ايديكم وارجلكم ولا تعصوا فى معروف فمن وفي منكم اجره على الله ومن اصاب من ذلك شيأ على ستره الله عليه فهو ثم الله ان شاء عفا عنه وان شاء عاقبه

فبا يعناه على ذلك. متفق عليه

অর্থাৎ রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম একদল সাহাবী পরিবেষ্টিত অবস্থায় এরশাদ করেছেন তোমরা আমার নিকট বায়আত গ্রহণ করো এ মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কোন বস্তুকে অংশীদার দাঁড় করাবে না, চুরি করবে না, ব্যাভিচারে লিপ্ত হবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, এমন অপবাদ আনয়ন করবেনা যাকে আপন হাত ও পায়ের মধ্যখানে রটাবে এবং কোন সৎকর্মে নাফরমানি করবে না। অতএব যে কেউ উপরোক্ত বিষয়ের উপর গৃহীত বায়আত তথা দৃঢ় অঙ্গীকার পূরণ করবে তার প্রতিদান আল্লাহ পাকের জিম্মায় নির্ধারিত। আর যে কেউ উপরোক্ত নিষিদ্ধ বিষয়ে লিপ্ত হবে অতঃপর পৃথিবীতেই তার সাজা প্রদান হবে তবে এ সাজা তার অপরাধের কাফ্ফারা হিসাবে গণ্য হবে। আর যে কেউ উপরোক্ত নিষিদ্ধ বিষয়ে লিপ্ত হবে অতঃপর আল্লাহ পাক তা গোপন করে রাখবেন তার ফয়সালা আল্লাহর মর্জির উপর নির্ভরশীল থাকবে। যদি তিনি চান তো বান্দা কে ক্ষমা করে দিবেন। অথবা বান্দা কে সাজা দেবেন। হাদীছ

বর্ণনাকারী ছাহাবী হযরত উবাদা বিন ছামেত (রাঃ) বলেন- আমরা উপরোক্ত বিষয়াবলীর উপর হাবীবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের বরকতময় হাতে বায়আত গ্রহণ করলাম। উপরোক্ত হাদীছে নববী শরীফের আলোকে সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় বায়আত গ্রহণ করা সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত। এবং এটা ছিল বায়আত আলাত তাকওয়া তথা তাকওয়া অবলম্বনের বায়আত। অন্য রেওয়ায়েতে সাইয়্যেদুনা ওবাদা বিন ছামেত রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন-

بايعنا رسول الله ﷺ على السمع والطاعة في العسر واليسر والنشط والمكره وان لا ننازع الامر اهله. অর্থাৎ আমরা ছাহাবায়ে কেরাম রাসূলে করীম রউফুর রহীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর হাতে এ মর্মে বায়আত গ্রহণ করলাম যে, প্রতিটি সহজ ও জটিল বিষয়ে এবং সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি সর্বাবস্থায় রাসূলে খোদা (দঃ) এর আদেশ নিষেধ শ্রবণ কর ও মান্য করব, এবং হুকুম দাতার সঙ্গে হুকুমের বিষয়ে বিবাদ বিসংবাদে জড়িত হব না। (ফাতাওয়া আফ্রিকা)

উপরোক্ত হাদীছে বিবৃত বায়আত ও ছিল বায়আত আলাত তাকওয়া বা তাকওয়া-পরহেজগারী অবলম্বনের উপর ঈস্পাত কঠিন শপথ গ্রহণ করা। ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিম শরীফ সহ সকল নির্ভরযোগ্য হাদীছের কিতাবে বর্ণিত আছে-রাসূলে করীম রউফুর রহীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারায় ছাক্রীফায়ে বনী ছায়েদায় আনছার-মুহাজির সাহাবীগণের মজলিশে সাইয়্যেদুনা আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু খালীফাতুল মুসলেমিন মনোনীত হন সর্বসম্মতিক্রমে। সর্বপ্রথম সাইয়্যেদুনা ওমর ফারুকে আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং এরপর সকল সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাতে খেলাফতের বায়আত গ্রহণ করেন। এটা ছিল বায়আত আলাল খেলাফত তথা খলিফাতুল মুসলিমিন এর আনুগত্য করায় অঙ্গিকারাবদ্ধ হওয়া।

বায়আতের প্রকারভেদঃ

উপরোক্ত কুরআন-সুন্নাহর মর্মবাণীর আলোকে হযরাতে মুহাদ্দেসীন ও মুফাচ্ছেরীনের বর্ণনানুযায়ী বায়আত বিভিন্ন প্রকারের হয়। যথাঃ (এক) বায়আত আলাল ঈমান ওয়াল ইসলাম অর্থাৎ ঈমান-ইসলাম গ্রহণের উপর বায়আত গ্রহণ করা (দুই) বায়আত আলাল জিহাদ অর্থাৎ শত্রুর মোকাবিলায় যুদ্ধক্ষেত্রে অটল-অবিচল থাকার বায়আত গ্রহণ। ষষ্ঠ হিজরীর হুদায়বিয়ায় বায়আতে রিদওয়ান ছিল বায়আত আলাল জিহাদ। (তিন) বায়আত আলাল খিলাফত তথা খলিফাতুল মুসলিমিন এর হাতে বায়আত গ্রহণ করা। (চার) বায়আত আলাত তাওবাহ (পাঁচ) বায়আত আলাত তাকওয়া ওয়াল আমালিছ ছালিহা অর্থাৎ তাকওয়া ও নেক আমলের উপর বায়আত গ্রহণ করা ইত্যাদি। (তাফসীরে খাজায়েনুল ইরফান, নূরুল ইরফান ও মিরআত শরহে মিশকাত)

আরব-অনারব নির্বিশেষে সমগ্র মুসলিম জাহানে শায়খে কামেল ও মুর্শিদে বরহকের হাতে বায়আত গ্রহণের চলমান প্রক্রিয়া বায়আত আলাত তাকওয়া। এটা কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত আমল, ছাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত এটাকে কেন্দ্র করে বিতর্কের অবতারনা অমুলক, ভিত্তিহীন, অগ্রহণযোগ্য। বায়আত মানে দৃঢ় অঙ্গীকার, ঈস্পাত কঠিন শপথ। পাবন্দে শরিয়ত, মুত্তাবেয়ে সুন্নাত শায়খে
কামেলের হাতে তাকওয়া নির্ভর জীবন যাপনের অঙ্গিকারাবদ্ধ হওয়ার নাম বায়আত। এ বায়আত আবার দুই ভাগে বিভক্ত। (এক) বায়আতে তাবাররুক তথা বরকত অর্জনের জন্য বায়আত গ্রহণ করা। আ’লা হযরত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মীল্লাত, ইমামে ইশক ও মুহাব্বত, শাহ মাওলানা ইমাম আহমদ রেজা ফাজেলে ব্রেলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেছেন-এহেন বায়আত ও বৃথা যায় না। দুনিয়া-আখিরাত উভয় জাহানে এ ধরণের বায়আতে তাবাররুক ও অনেক অনেক সুফল বয়ে আনে। কারণ, এ বায়আত এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর প্রিয় ভাজন নৈকট্য প্রাপ্ত বন্ধুগণের

গোলামদের দফতরে নিজের নাম রেকর্ড করে প্রকৃত আল্লাহ প্রত্যাশী মুরীদের রূপ ধারণ করল। এটা বিফলে যেতে পারে না। কেননা, হাদীছে পাকে রাসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- من تشبه بقوم فهو منهم অর্থাৎ মানুষ (আকিদায়, আমল-আখলাকে) যে সম্প্রদায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করবে সে তাদেরই দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। তাছাড়া আল্লাহ ওয়ালাদের মজলিশে ক্ষণিকের জন্য অবস্থান করা শত বছরের নফল ইবাদত অপেক্ষা শ্রেয়তর নেয়ামত হিসাবে গণ্য সেখানে তাদের হাতে বায়আত গ্রহণ করা খোদায়ী রহমত বরকত থেকে খালী হতে পারে না কখনো।

ইমাম আবুল হাছান নূরুদ্দীন আলী (রঃ) বাহজাতুল আসরার শরীফে বর্ণনা করেছেন একদা গাউছুল আজম দস্তগীর সাইয়্যেদুনা শায়খ সৈয়্যদ মীর মুহীউদ্দীন আবু মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকট আর্জিপেশ করা হয় যে, হুজুর! কোন ব্যক্তি যদি আপনার নাম স্মরণ করে অথচ সে আপনার হাতে বায়আত গ্রহণ করে নাই কিংবা অজীফা গ্রহণ করে নাই সে কি আপনার মুরীদগণের মধ্যে গণ্য হবে? জবাবে গাউছে পাক শাহিনশাহে বাগদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এরশাদ করলেন-

من انتمى الى وتسمى لى قبله الله تعلى وتاب عليه ان على سبيل مكروه وهو من جملة

اصحابى وان ربى عز وجل وعدنى ان يدخل اصحابى واهل مذهبي وكل محب لي الجنة. অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজকে আমার প্রতি সংশ্লিষ্ট করবে এবং নিজের নাম আমার গোলামদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করবে আল্লাহ পাক তাকে কবুল করবেন। আর সে যদি কোন অপছন্দনীয় কর্মে লিপ্ত থাকে আল্লাহ পাক তাকে তাওবার তৌফিক দান করবেন। এবং সে আমার মুরীদগণের অন্তর্ভুক্ত হবে। মহান আল্লাহ পাক আমার সঙ্গে ওয়াদা করেছেন যে, আমার মুরিদ, মতাদর্শের অনুসারী এবং আমার প্রেমিকদের কে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। (আলহামদুলিল্লাহ)

উপরোক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় আউলিয়ায়ে কামেলীনের বরকতময় নাম স্মরণ করা, তাঁদের প্রতি ভক্তি ভালবাসার বন্ধন স্থাপন করা, খোদায়ী রহমত বরকত এর ওসীলা হয়ে যায়। সুতরাং বায়আতে তাবাররুক ও দুনিয়া আখেরাত উভয় জাহানে অপরিসীম কল্যাণ মঙ্গল বয়ে আনবে নিঃসন্দেহে। দ্বিতীয়তঃ বায়আতে ইরাদত। অর্থাৎ নিজের ইচ্ছা এখতেয়ার মর্জি হতে বের হয়ে নিজের সত্ত্বা কে শায়খে কামেল মুর্শেদে বরহক এর হাতে নিঃশর্তে সমর্পণ করা, তাঁকে নিজের প্রশাসক-পরিচালক-মুনিব-কর্তৃত্বশীল হিসেবে গ্রহণ ও মান্য করে তাঁর ইচ্ছা ও মর্জির বিপরীতে এক কদম ও অগ্রসর না হওয়া। এককথায় গোসল দানকারীর হাতে মৃত ব্যক্তি যেমন সমর্পিত হয়,

শায়খে কামেলের হাতে বায়আতে ইরাদত গ্রহণ কারী মুরীদকেও আত্মসমর্পণ করতে হয়। শায়খে কামেলের সম্মুখে কি ও কেন? প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। কেননা, মুর্শিদে কামেলের হুকুম মূলতঃ আল্লাহ-রাসুলের হুকুম। এতে কোনরূপ সংশয় সন্দেহ করার অবকাশ নেই। যেমন عوارف المعارف কিতাবে শায়খ সিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেছেন دخوله ICCOR 3 1 في حكم الشيخ دخوله في حكم الله ورسوله واحياء سنة المبايعة হুকুমে পরিচালিত হওয়া মানে আল্লাহ রাসুলের হুকুমে পরিচালিত হওয়া। এবং বায়আত গ্রহনের সুন্নাত কে জীবিত করা।

ولا يكن هذا المريد حصر نفسه مع الشيخ وانسلخ من Bitate footta wil afte ace afe Battle of ارادة نفسه وفني في الشيخ بترك اختيار نفسه. না, কিন্তু ঐ মুরীদের হয় যে নিজের প্রাণ কে মুর্শিদে কামেলের হাতে বন্দী রেখেছে এবং নিজের ইচ্ছা মর্জি কে সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করে শায়খে কামেলের মধ্যে নিজেকে ফানা করে ফেলেছে। (সুবহানাল্লাহ)

আলোচ্য বায়আতে তাবাররুক ও বায়আতে ইরাদত এর বর্ণনা প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত আরেক কামেল শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি عواف المعارف কিতাবে উল্লেখ করেছেন- واعلم ان الخرقة خرقتان خرقة الارادة وخرقة التبرك والأمل الذي قصده المشائخ للمريدين خرقة الارادة . والخرقة التبرك تشبه بخرقة الارادة فخرقة الاراده للمريد

الحقيقي رخقرقة التبرك للمتشبه ومن تشبه بقوم فهو منهم. অর্থাৎ জেনে রেখো, বায়আত দুভাগে বিভক্ত। (এক) বায়আতে ইরাদত (দুই) বায়আতে তাবাররুক। মুলতঃ বায়আতে ইরাদতই মাশায়েখ হযরতের লক্ষ্য মুরীদগণের জন্য। বায়আতে তাবাররুক হলো বায়আতের ইরাদতের সঙ্গে বাহ্যিক সামঞ্জস্য স্বরূপ। বায়আতে ইরাদত গ্রহণকারীই হলো প্রকৃত ও যথার্থ মুরীদ। আর বায়আতে তাবাররুক গ্রহণকারী হলো সামঞ্জস্য রক্ষাকারী।

শায়খে কামেল ও মুর্শিদেবরহকের বৈশিষ্ট্যাবলীঃ

আল্লাহ ও তাঁর প্রিয়তম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সন্তুষ্টি সান্নিধ্য অর্জন, ইহকালীন জীবনে শান্তি সমৃদ্ধি, পরকালীন জীবনে মুক্তি এবং সর্বোপরি আত্মিক পরিশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে বায়আত গ্রহণ মুমিনের জীবনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ বিষয়। এ বিষয়ে কোনরূপ শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই। ঈমান-আক্বিদা, আমল-আখলাক এর সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির স্বার্থে কুরআন সুন্নাহ নির্দেশিত পন্থায় সঠিক যাচাই বাছাই ও অনুসন্ধান পূর্বক মুর্শিদে কামেলের হাতে বায়আত গ্রহণ জরুরী। নতুবা নাম সর্বস্ব, আকর্ষণীয় বেশ ভূষাধারী প্রচার নির্ভর নানা কৌশলে গদী দখলকারী পীরের নামে কলংক প্রতারক ভন্ডের ফাঁদে পড়ে দুনিয়া আখেরাত উভয় জাহান ধ্বংস হতে বাধ্য। এ জন্য পাক ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুহাক্কিক আলেমে দ্বীন শাহ ওয়ালউিল্লাহ মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর রচিত প্রসিদ্ধ কিতাব “আল কুওলুললিল
জামীল” এ মুর্শিদে বরহক হিসেবে বায়আত গ্রহণকারীদের জন্য কতিপয় শর্ত নির্ণয় করেছেন। নিম্নে তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-

প্রথম শর্তঃ على الكتاب والسنة لا اريد مرتبة القصوى بل يكفى منه على الكتاب أن يكون قد ينفظ تفسير المرادك الجلالين.

১.

অর্থাৎ প্রথম শর্ত হলো- কুরআন সুন্নাহর উলুমের অধিকারী হওয়া। উচ্চ পর্যায়ের ব্যাপক ইলমের অধিকারী হওয়া জরুরী-এটা আমার উদ্দেশ্য নয়। বরং তাফসিরে মাদারেক ও তাফসীরে জালালাইন শরীফ পড়তে, বুঝতে ও বুঝাইতে সক্ষম-এতটুকু হলেই যথেষ্ট।

العداوالة التقوى واجب أن يكون مجتنبا عن الكبائر غير مصر على صغائر : অর্থাৎ দ্বিতীয় শর্ত হলো- ন্যায় পরায়ণতা, তাকওয়া পরহেজগারী, সর্বদা কবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকা এবং ছগীরা গুনাহে বারংবার লিপ্ত না হওয়া, ওয়াজীব।

তৃতীয় শর্তঃ পার্থিব লোভ প্রলোভন ত্যাগী হওয়া এবং আখেরাতের প্রতি উদগ্রীব হওয়া। সর্বদা আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকা।

চতুর্থ শর্তঃসৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কর্মে বাধা প্রদানকারী হওয়া। এবং এতটুকু বিবেক

বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হওয়া যাতে তার কথার উপর আস্থা থেকে অস্থির না হওয়া।

পঞ্চম শর্তঃদীর্ঘকাল অবধী মুর্শিদে কামেলের ছুহবতে সান্নিধ্যে অবস্থান করে রূহানী ফয়েজ অর্জনকারী হওয়া। উপরোক্ত শর্তাবলী সমৃদ্ধ হয়ে নিজে আলোর অধিকারী হলেই তো অন্যকে আলোকিত করা যায়। আর জাগতিক লোভ-প্রলোভন ও স্বার্থের অন্ধকারে নিমজ্জিত থেকে অন্যকে আলোকিত করার দাবী হাস্যকর।

আলা হয়রত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত ইমামে ইশক ও মুহাব্বত শাহ মাওলানা ইমাম আহমদ রেজা ফাজেলে বেরলভী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন- মুর্শিদে কামেল যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ রাসুল (দঃ) পর্যন্ত পৌছবে তার হাতে বায়আত গ্রহণ যথার্থ ও ফলদায়ক হওয়ার জন্য চার শর্ত বিদ্যমান থাকা অপরিহার্য। যথাঃ

প্রথমতঃ মুর্শিদে বরহকের সিলসিলা মুত্তাসিল তাহা রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্লাম পর্যন্ত সংযুক্ত হতে হবে। মাঝখানে গ্যাপ কিংবা ফাক থাকতে পারবেনা মাঝপথে যদি ফাঁক থাকে তবে

রাসুলে খোদা (দঃ) এর ফায়জ পাওয়া যাবে না। দ্বিতীয়তঃ মুর্শিদে বরহক চুন্নী ছহীহ আকায়েদে আহলে সুন্নাতের বিশ্বাসী হওয়া। গোমরাহ বদ

আকিদার অধিকারীর হাতে বায়আত গ্রহণ করলে শয়তান পর্যন্ত পৌঁছা যাবে। আল্লাহ রাসুল পর্যন্ত নয়।

তৃতীয়তঃ আলেম হওয়া। চতুর্থতঃ প্রকাশ্য ফাসেক ফাজের না হওয়া।

উপরোক্ত শর্তাবলী সমুদ্ধ শায়খে কামেলের হাতে বায়আত গ্রহণ করলে ঈমান-আকিদা, আমল-আখলাক এর হেফাজত ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করতঃ আল্লাহ রাসুল পর্যন্ত পৌছা নিশ্চিত হবে। এর ব্যতিক্রম হলে দুনিয়া আখেরাতে উভয় জাহান বরবাদ হবে নিঃসন্দেহে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *