ইসলামী সংস্কৃতির স্বরূপ

মুহম্মদ আবদুল কাদের ছাকিব আল কাদেরী

ইসলাম একটি পরিপুর্ণ জীবনবিধান, মানব সমাজের প্রতিটি উপাদানের পরিপূর্ণ এবং সর্বময় দিকনির্দেশনা আছে ইসলামে। মানব সমাজে একজন মানুষের যে বিষয়/যে বস্তুগুলো একেবারেই অবিচ্ছেদ্য অমধ্যে অন্যতম হলো, সংস্কৃতি।

ইসলাম শুধুমাত্র নামায, রোযা, হজ্ব, দান সাদাকাহ বা অপরাপর দৃশ্যমান কিছু আমলে সীমাবদ্ধ নয়, ইসলামে সামাজিক বিভিন্ন বিষয়াদি এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠানের রূপরেখা অঙ্কিত আছে, একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম’ তিনিই, যিনি, তাঁর প্রতিটি কাজে ইসলামী অনুশাসন অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করেন, বিশ্বজাহানের পালনকর্তা মহান আল্লাহ
তায়ালাও সে নির্দেশ দিয়েছেন।
يأيها الذين آمنوا ادخُلُوا فِي السَّلْمِ كَافَّةً ، ولا تتبعوا خطوات الشيطن إنَّه لكم عدو مبين(1)

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো, আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
ইসলামী সমাজব্যবস্থার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র মাসজিদ, যেখান থেকে শরঈ ফরমান জারীর পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটে। সামাজিক

ডিসিপ্লিন এবং সুস্থ সংস্কৃতির বিস্তারে মাসজিদের অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। কুরআনে কারিমের নির্দেশনা মুতাবিক;
يبني أدم خُذُوا زينتكم عِنْدَ كُل مسجد

“হে আদম সন্তানগণ! তোমরা তোমাদের মাসজিদ সমুহ হতে তোমাদের সৌন্দর্য সমুহ কে ধারণ/গ্রহন করো”(2)
একজন ঈমানদারের পক্ষে ইসলামী অনুশাসন, বিধি-বিধান কে তোয়াক্কা না করা, অথবা, বিজাতীয় সংস্কৃতি এবং অনুশাসন কে লালন করা কস্মিনকালেও সম্ভবপর নয়, ইসলামী সংস্কৃতির বিশালতা এবং পরিব্যাপ্তি এতোটাই যে, কোনো মুসলিম এর বিরোদ্ধাচরণ এবং বা বিপরীতমুখী আচরণ করা বোকামি, অজ্ঞতার নামান্তর। সমাজে বসবাসরত প্রত্যেক মুসলিমের একান্ত কর্তব্য হলো, দৃশ্যমান প্রতিটি ইবাদতের মতো সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও আল্লাহ তায়ালার শুকুম কে শতোভাগ মেনে নেয়া। রাসুলে কারিম(দরূদ)ইরশাদ করেন;
الإسلام أن يسلم قلبك لله وأن توجه وجهك إلى الله – وتصلّى الصّلاة المكتوبة وتؤدى الزكاة المفروضة . لا يقبل الله من أحد توباً أشرك بعد إسلامه

আল্লাহর প্রিয়তম হাবিব (দরূদ) ইরশাদ করেন-(3) “ইসলাম হলো “তোমার কালব বা অন্তকরণ কে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর সমীপে আত্মসমর্পন করানো, তোমার চেহারা (মনোযাগ) কে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেয়া (আল্লাহর সন্তুষ্টিকে উপজিব্য বানানো)।” আর তুমি ফরজ সালাত আদায় করবে ও যাকাত প্রদান করবে। নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি ইমান আনয়নের পর শিরকে লিপ্ত হয়, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন না।”

নিতান্তই পরিতাপের বিষয়। আমরা রাসুলেপাক (দরূদ)’র এই নির্দেশ কে বেমালুম ভুলে গিয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন কে আপন করে নিয়েছি। বিজাতীয় অনাচারগুলো কে আমাদের সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে পরিবর্তন করেছি, বর্বরতা কে আধুনিকতার নাম দিয়েছি, অপরদিকে ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতি কে সেকেলে, অচল, মধ্যযুগ বলে-বলে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। মেহেদি সন্ধ্যা, র‍্যাগ ডে, সঙ্গিত, সাকরাইন, হলি-রঙোলি, পার্টি ইত্যাদি হাজারো নামের বেলাজা অনুষ্ঠান আজ মুসলিম সমাজের অংশে পরিণত হয়েছে।ততোধিক পরিতাপের ব্যপার কী জানেন? মুসলিম বিশ্বের তথাকথিক মোড়ল, নিজেদের ইসলামী দেশ পরিচয় দেয়া শাসকগোষ্ঠী এবং ইসলামের স্বঘোষিত পাহাড়াদারগণ যখন, মুসলিমদের পূণ্যভূমিতে ফ্যাশন শো’র নামে অর্ধনগ্ন নারীদের প্রদর্শনি বসায়, পশ্চিমা বেলাজা-বেহায়াদের তালে কোমর দুলিয়ে পূণ্যভূমি কে কলঙ্কিত করে। হারামাইনের ভূমিতে সিনেমা হল এবং নাইট ক্লাব খোলে ব্যাভিচার ও অনাচারের রমরমা সাম্রাজ্য বিস্তার করে তখন মুসলিমদের নৈতিক চরিত্র এবং সাংস্কৃতিক সংস্কার অতিব বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে।

হে মুসলমান! মনে কি পড়ে? আইয়ামে জাহেলিয়ার সেই অসুস্থ সংস্কৃতির কথা, যে যুগে মানুষ, পরম করুণাময়ের দেয়া সব শালীনতার সীমা ডিঙিয়ে এক অশালীন অনাচারময় সংস্কৃতি কে সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছিলো।যে অপসংস্কৃতির কফিনে পেরেক ঠুকে দিয়েছেন প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (দরূদ), আল আমিন(4) এর নাবুয়াতি হাত মুবারকের পরশে ইসলামী সংস্কৃতির সূর্যোদয় জাহেলিয়াতের সব আঁধার দূরিভূত হয়েছে, তাঁর মাধ্যমে সকল অশ্লিলতা এবং অনাচার কে নিষিদ্ধ করেছেন মহান আল্লাহ তায়ালা,
قل إنما حرم ربي الفواحش ما ظهر منها وما بطن والاثم

“হে নবি! আপনি বলোন; নিশ্চয়ই আমার প্রভু গোপন-প্রকাশ্য সব ধরনের অশ্লীলতা এবং পাপাচার কে হারাম করেছেন”(5)

ইসলামী সংস্কৃতির উপাদান:- বিজাতীয় অশ্লিল অনাচারপূর্ণ সংস্কৃতির ধুম্রজাল কে ছিন্ন করে ইসলামী সংস্কৃতি যে উপাদানগুলোতে নির্ভর করত এগিয়ে গিয়েছে তাহলো:
ক) কুরআন
খ) সুন্নাহ
গ) তাহযিব-তামদ্দুন
এবং
ঘ) সামাজিক শিষ্টাচার (6)
বর্তমান মুসলিম বিশ্ব এরূপ প্রাচুর্যশালী একটি সংস্কৃতি কে অবমূল্যায়ন করে, অন্তসারশূণ্য পশ্চিমা অপসংস্কৃতিতে সুখ খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করছে, সস্তা জনপ্রীয়তা অর্জনের নেশা, ট্রেন্ডের তালে মাতলামো, এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের নগ্ন অনুসরণ কে আমরা সভ্যতা হিসেবে ধরে নিয়েছি। কিন্তু রাসুলে পাক (দরূদ) এই ব্যপারে নিরুৎসাহিত করেছেন,

قال رسول الله صلى الله وسلم : من تشبه بقوم فهو منهم

রাসুলে আকরম (দরূদ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুসরণ করবে (চলনে-বলনে) সে তাদের অন্তর্গত (সে ধর্মাবলম্বী), (7)

একজন সচেতন মুসলিম কখনোই চাইবে না, তাঁর হাশর (পুনরুত্থান) কোনো কাফির মুশরিক বা কোনো অর্ধনগ্ন কোনো নর্তকীর সাথে হোক, কেনো না, এমতবস্থায় জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা।

সুপ্রীয় পাঠক সমাজ, দিনকে দিন সমাজে মরণব্যধির মতো ছড়িয়ে পড়তে থাকা অশ্লীলতা কে রুখে দেয়া এবং অশ্লীলতা বিস্তারকারীদের চিহ্নিত করত সতর্ক করা একান্ত আবশ্যক। নয়তো বিশাল একটি বিপর্জয় মুসলিম সমাজের জন্য অপেক্ষমান।যেমন ইরশাদ হয়েছে; (8)

إن الذين يحبون أن تشيع الفاحشة في الذين أمنوا لهم عذاب أليم في الدنياء والأخرة

“আর যারা ঈমানদারদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়া কে পছন্দ করে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে মমান্তুদ শান্তি রয়েছে।”

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সমাজ কে প্রচলিত সব অম্লীলতা থেকে রক্ষা করোন। (চলবে),

খতিব: পাঠানটুলী চাট্টশ্বরাই গায়েবী সমজিদ, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম,

ওস্তাজ: তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া সুলতান মোস্তফা কমপ্লেক্স, রোয়ালখালী, চট্টগ্রাম,

পাদটীকাঃ

(1)আল কুরআন- ‘সূরা বাক্বারা, ২-২০৮
(2)আল কুরআন -সূরা আ’রাফ, ৭:৩১
(3)মুসনাদ আল আহমদ ; ‘হযরত হাকিম ইবনু মুয়াবিয়া রাদ্বি. হতে বর্ণিত: হাদিস নম্বর :২০০২২
(4)আল-আমিন বা বিশ্বস্ত। নাবুয়ত প্রকাশিত হবার পূর্বে মক্কার মানুষ এ নামে ডাকতেন।
(5) আল কুরআন, সূরা আ’রাফ, ৭:৩৩
(6) ‘ফাওয়াইদুল মুবাশ্শির ফী খুতবাতি আবদুল কাদের’, খুতবা ; জুমাদাল উলা,১৪৪৬.
(7) সুনানু আবি দা’ঊদ: হযরত ইবনু ওমর রাদ্বি. হতে বর্ণিত, হাদিস নম্বর; ৪০৩১
(8) আল কুরআন, সূরা- আন-নূর, ২৪:১৯।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *