মাওলানা মুহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দীন
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের কতিপয় আক্বীদা ও আমল
মুসলমী শরীয়ত সমর্থিত যেসব আমল যুগ-যুগ ধরে মুসলিম মিল্লাতে পালিত হয়ে আসছে। তন্মধ্য হতে কতিপয় বিশেষ আমল এখন সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করব:
১. পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী
প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম যেদিন দুনিয়াতে শুভাগমন করেন, সেদিনটি কেবল মুসলিম মিল্লাতের জন্যই নয়, বরং সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য আনন্দের দিন। কারণ তিনি আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে সৃষ্টির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ নি’মাত আর সৃষ্টির মূলউৎস রহমাতুল্লিল আলামীন। আল্লাহর পক্ষ হতে কোন দয়া, রহমত, করুণা, অনুকম্পা ও অনুগ্রহ প্রাপ্তিকে উপলক্ষ করে আনন্দ-উল্লাস ও উৎসব উদযাপন করার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ তা’আলাই প্রদান করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থাৎ। নবী! আপনি বলুন, আল্লাহর দয়া এবং রহমত উপলক্ষ করে তারা যেন আনন্দ উদযাপন করে এবং তা হবে তাদের অর্জিত সবকিছুর চেয়েও শ্রেষ্ঠ।
আল্লাহ তা’আলার শ্রেষ্ঠ নি’মাত তারই প্রিয়হাবীব আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজীর আগমনী দিবসকে উপলক্ষ করে বর্ণাঢ্য মাহফিল করা, ইসলামী সংস্কৃতির আলোকে আনন্দ উদ্যাপন করা, জশনে জুলুস তথা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ইত্যাদিই হল পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি
ওয়াসাল্লাম।
যুগে যুগে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের প্রখ্যাত ইমাম ওলামা-ই কেরাম ও রাজা-বাদশাহগণ মহা ধুমধামের সাথে এসব পালন করে আসছেন। আমাদের দেশে ১৯৭৪ সালে যুগশ্রেষ্ঠ অলীয়ে কামেল গাউসে যামান মুর্শেদে বরহক হাদীয়ে দ্বীনও মিল্লাত রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরীকত আল্লামা হাফেয ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রহমাতুল্লাহি আলায়হি জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি
সেলসোনান ২৫
ওয়াসাল্লাম’র মত যুগান্তকারী কর্মসূচি উদ্বোধন করে ঈদে মিলাদুন্নবীর উদযাপন মাত্রাকে আরো ব্যাপক ও গুরুত্ববহ
করে তোলেন। এ জশনে জুলুস, প্রথমে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় সর্বপ্রথম হুজুর কেবলার বলিষ্ঠ পরিচালনা ও আধ্যাত্মিক নির্দেশনায় শুরু হলে বাতিলপন্থীরা তো বটে এমনকি কিছু কিছু সুন্নী নামধারীরাও এর বিরোধিতা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আল্লাহর অলীদের কাজ মহান আল্লাহর ইশারায় হয়ে থাকে। একে থামাবে কে? আলহামদু লিল্লাহ। হুজুর কেবলার প্রদর্শিত সেই জুলুস আজ ফলে ফুলে যেন সুশোভিত হয়ে ওঠল। লক্ষ লক্ষ নবীপ্রেমিক রাজপথে নেমে এসে রঙ-বেরঙের ফেস্টুন-ব্যানার নিয়ে নবীপ্রেমের সিন্দুতে অবগাহন করে হারিয়ে যায়, নিজেদের অজান্তে আল্লাহর দরবারে। যারা প্রথমে একটু-আধটু আড় চোখে তাকিয়েছিল, তাদেরকেও আজ এ জশনে জুলুস পালন করতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, সুন্নী মুসলমানদের জোয়ার দেখে বাতিলপন্থীরাও থেমে নেই। এক সময় যে জুলুসকে তারা বিদ’আত ফতোয়া দিত এখন সেটা আবার তাদের জন্য জায়েয হয়ে গেল। তারাও দেখি এখন রবীউল আউওয়াল মাস আসলে জুলুস বের করে। তবে নামটা দিয়েছে ‘বর্ণাঢ্য র্যালি’। যেটা কধু সেটাই তো লাউ। ইংরেজীতে যাকে র্যালি বলে ফার্সীতে সেটিকে জুলুস বলে। মজার ব্যাপার হল! তাদের জন্য ইংরেজী নামটা জায়েয হয়ে গেল, আর জুলুস নাজায়েয ও বিদ’আত ইত্যাদি হয়ে গেল। তবে জেনে রাখা দরকার মানুষ এখন আগের মত বোকা নেই। তারা সবই বুঝে। সুতরাং চোখে বালি দিয়ে বোকা বানানোর সময়
ফুরিয়ে এসেছে।
২. মিলাদ-ক্বিয়াম
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আরেকটা আলামত হল এরা প্রিয়নবীর শানে অত্যন্ত আদবের সাথে মিলাদ কিয়াম পালন করেন। ‘মিলাদ’ মানে প্রচলিত অর্থে নির্দিষ্টপন্থায় নবীজীর শানে দুরূদ-সালাম প্রদান করা, আর ক্বিয়াম হল নবীজীকে সালাম প্রদানের এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের প্রয়াস। সাহাবা-ই কেরামের বৈঠকে নবীজী কখনো আগমন করলে তাঁরা সবাই ‘সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যেতেন। আবার নবীজী প্রয়োজনীয়
কথাবার্তা সেরে হুজরা মুবারকে প্রবেশ না করা পর্যন্ত তাঁরা সকলেই দাঁড়িয়ে থাকতেন। নবীজীর প্রতি কিভাবে সম্মান দেখাতে হবে তার শিক্ষা মহানবীর সঙ্গলাভে ধন্য সোনালী যুগের সে সব যুগশ্রেষ্ঠ মানুষ (সাহাবা-ই কেরাম) আমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে গেছেন।
মিশকাত শরীফের ‘বারল কিয়াম’-এ হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত একটি হাদীস শরীফে উল্লেখ
রয়েছে- فَإِذَا قَامٍ قُمْنَا قِيَامًا حَتَّى نَرَاهُ قَدْ دَخَلَ بَعضٍ
অর্থাৎ-হজর আলায়হিস সালাতু ওয়াস সালাম যখন বৈঠক بيوت ازواجه অর্থাৎ- হার আলায়হিস সালাদাড়িয়ে যেতাম এবং এতটুকু পর্যন্ত দেখতাম যে তিনি কোন মহিয়ষী বিবির ঘরে প্রবেশ করছেন।
দিলাম খ্যাত মুহাদ্দিস ও হাদীস রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, বুযুর্গানে দ্বীনের তাশরীফ গেলে আনয়নের সময় দাঁড়ানো মুস্তাহাব। এর সমর্থনে অনেক জানুয়ারীফ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে দেন সুস্পষ্ট কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি।
তাছাড়া আল্লাহর মহান রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ধাঁধায় ওয়াসাল্লামকে সালাম প্রদানের সময় “এয়া নবী সালাম চট্টগ্রাম, উম্মতের দখলে দাঁড়ানো ধীজীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এটিএন’র আল্লাহ
وَتُعَزِّرُوهُ وَ تُوَقِّرُوهُ
(হে মুসলমানরা তোমরা আমার নবীকে সহযোগিতা কর আর তাঁকে সম্মান কর) আর সালাম প্রদানের ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন-
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلَّمُوا تَسْلِيمًا অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা তাঁর (নবীর) উপর দুরূদ পড় আর সালাম প্রদানের মত করেই সালাম প্রদান কর। এখানে ‘তাসলীমান’ শব্দ দ্বারা তা’কীদ (দৃঢ়তা) বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যেভাবে সালাম প্রদান করলে নবীজীর প্রতি সম্মান বেশি প্রদর্শিত হবে সেদিকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। সুতরাং বসে বসে সালাম দেয়ার মধ্যে সম্মান বেশি হবে না। একাগ্রতার সাথে মহাব্বতের সাথে দাঁড়িয়ে সালাম প্রদানে সম্মান বেশি তা বিবেচনায় রেখে যুগে যুগে প্রসিদ্ধ ইমাম ও বুযুর্গানে দ্বীন ও হক্কানী পীর-মাশাইখ ক্বিয়াম করে মিলাদ পাঠ নিজেরাও করেছেন এবং
অনুসারীদেরকেও তা পালন
করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়ান জামা’আতের অন্যতম নিদর্শন। বর্তমানে ওহাবীরা কোন অবস্থাতেই মিলাদ-ক্বিয়াম করতে রাজি নয় কারণ, এতে করে নবীজীর প্রতি সম্মানটা যদি একটু বেছে যায়? কারণ, তাদের মুরব্বীরা বলেছেন, “নবাংছ বড়ভাইয়ের মত করে সম্মান কর, এর চেয়ে একটুও বেশি নয়।” টাকা-পয়সা পেলে আবার কোন কোন এরাও কিয়াম করে থাকে, তাও এদেশের মুসলমানরা জেল ফেলেছে। অতএব, টাকার বিনিময়ে যারা দ্বীন-ধর্ম বিচি জায়গায় বাতিলপন্থ
করতে পারে, তাদের চেয়ে জালিম আর কে হতে পারে? আমাদের দেশের আরেকটি ভ্রান্ত দল জামায়াতে ইসলামীর অনুসারীরা এ ক্ষেত্রের ভারাম, ন্যাজায়েলের নেতাদের মায় হলেও অনসারীরা কোথাও করে আবার কোথাও করেন। মজার ব্যাপার হল! তাদের অন্যতম নেতা মৌং সাঈদা কিয়াম করেনা। ক্ষেত্রভেদে এদেরকে মিলাদ-কিয়ামতেরদিয়া করতে দেখা যায়। আবার এটিএন’র পর্দায় এলে ফতের মিলাদ শরীফ, ক্বিয়াম করা বিদ’আত। একই বাড়ির এতগুলো রূপ দেখে এদেশের মুসলমানরা ইতোমধ্যেই পড়ে গেছে। তাহলে বুঝি ইসলামী শরীয়ত, ঢাকা না খুলনা, রাজশাহী অঞ্চলভেদে বিভিন্ন হয়ে যায়, অর পর্দায় আরেকটা। আসলে কোন ধর্ম অনুসরণ করেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। সময় অস স্থানের ব্যবধানে যারা নিজেদের খোলস পাল্টিয়ে ফেলতে আমর পারে, তাদের সাথে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের
দূরতম সম্পর্কও থাকতে পারেনা। আর তবলীগ পন্থীরা তো মিলাদ-ক্বিয়ামের কথা শুনলেই আমা বেড়ালের লেজে চাপ পড়ার মতই আঁতকে উঠে। তারা কি করোনা খবর রাখেন, তাদের নেতা মৌং আশরাফ আলী থানভী, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীদেরও যিনি ওস্তাদ ছিলেন হযরত হাজী রাইকো ইমদাদ উল্লাহ মুহাজিরে মক্কী নিজেও মিলাদ-কিয়াম রায় করতেন এবং এর স্বপক্ষে প্রামাণ্য পুস্তকও রচনা করেছেন। জাতি পুস্তকের নাম ‘ফায়সালাহ-এ হাফত মাসআলা’। তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত’র অনুসারী ও নবীপ্রেমিক ছিলেন। আর তার উল্লিখিত ছাত্ররা হযরত নূহ আলায়হিস সালাম’র পুত্র কেনানের মত গোমরাহ হয়ে গেছে। ৩.
রসূলে পাকের নাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলিতে
চুমু খেয়ে চোখে লাগানো
আমাদের প্রিয়নবী আক্বা ও মাওলা মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্রতম নাম মুবারক – শুনামাত্র নবীপ্রেমিক মুসলমানরা বৃদ্ধাঙ্গুলিতে চুমু খেয়ে চোষে মালিশ করে থাকেন। এটি খুবই বরকতপূর্ণ আমল। আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আলায়হিস সালাম ও বকর সিদ্দীকু রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সুন্নাত। আল্লাহ তা’আলা একদা হযরত আদম আলায়হিস সালাম’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নূরে মুহাম্মদীকে তাঁর শাহাদাত আঙ্গুলির নখে হাজির করে দিয়েছিলেন। সেই নূর মুবারক দর্শনলাভে আদম আলায়হিস সালাম মহাব্বতের অতিশয্যে দু’আঙ্গুলি চুম্বন দিয়ে চোখের উপর লাগিয়ে নিয়েছিলেন। সুতরাং নবীজীর নাম মুবারক শুনে বা বলে কেউ যদি বর্তমানে এই আমলটুকু করেন, তাহলে একে নতুন কিছু বা বিদ’আত বলে আখ্যায়িত করার কোন যুক্তি থাকতে পারেনা।
তাফসীরে জালালাঈন শরীফের ৩৫৭ পৃষ্ঠার ১৩ নম্বর টাকায় একটি হাদীস শরীফ সঙ্কলন করা হয়েছে- “একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও হযরত আবূ স্বকর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র উপস্থিতিতে হযরত বেলাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আযান দিচ্ছিলেন। এমন সময় আযানে যখন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ’ উচ্চারণ করা হল, সাথে সাথে সিদ্দীকু-ই আকবর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু দু’হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি চুম্বন করে চোখে লাগালেন। আযান শেষ হওয়ার পর নবীজী ইরশাদ করলেন, “আবূ বকর যে কাজটি করল, কেউ যদি এ কাজ করে আমি কেয়ামতের ময়দানে তার জন্য সুপারিশ করব।” সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী! ‘মাকাসেদে হাসানাহ’ নামক কিতাবে রয়েছে- হযরত শামস মুহাম্মদ ইবনে সালেহ মাদানী থেকে বর্ণিত, তিনি ইমাম আহমদ রহমাতুল্লাহি আলায়হিকে বলতে শুনেছেন, “যে বাক্তি আযানে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র নাম মুবারক শুনে স্বীয় শাহাদাত ও বৃদ্ধাঙ্গুলি একত্রিত করে চুম্বন করে চোখে লাগাবে কখনো তার চক্ষু পীড়িত হবেনা।” তাফসীরে রুহুল বয়ান, ফতোয়ায়ে শামী, কানযুল ইবাদ, কৃহেস্তানী, বাহরুর রায়েক প্রভৃতি কিতাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। শতাব্দির মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান ব্রেলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি এ বিষয়ে প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে পুস্তক রচনা করেছেন। “মুনীরুল ‘আইনাঈন ফী হুকমি তাকবীলিল ইবহামাঈন”।
বর্তমানে বাতিল ফিরকা ওহাবী-মওদূদী তবলীগীরা এ বরকতপূর্ণ আমল পালন করাতো দূরের কথা, বরং অনেক
ক্ষেত্রে এ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে থাকে। (নাউযু বিল্লাহ)।
৪. ওসীলা
আল্লাহ তা’আলার নৈকট্যার্জনের জন্য নবী-ওলীর ওসীলা প্রয়োজন হয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রতিপালকের প্রতি ওসীলা তালাশ কর। সৃা মায়েদা, রুকু-৬০ পবিত্র হাদীস শরীফের বহু বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের ওসীলায় রহমত পাওয়া যায়। যেমন- মসনদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল কিতাবে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী চল্লিশজন আবদাল সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন
يُسْقَى بِهِمُ الْغَيْتُ وَيُنْتَصَرُوا بِهِمْ عَلَى الْأَعْدَاءِ وَيُصَرِّفُ عَنْ أَهْلِ الشَّامِ بِهِمُ الْعَذَابِ
অর্থাৎ: তাঁদের ওসিলায় বৃষ্টি বর্ষন করা হয় এবং তাঁদের মাধ্যমে শত্রুদের উপর বিজয়লাভে সাহায্য দেয়া হয়, আর তাঁদের (বরকত ও ওসিলা) দ্বারা শামবাসীদের থেকে আযাব দূরীভূত করা হয়।
-(মিশকাত, ২য় অধ্যায়, কিতাবুল ফিতন ফী ফিকরিল ইয়ামান ওয়াশ শাম) হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য মুহাক্কিক আলিম সর্বজন সমাদৃত মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘নুযহাতুল খাওয়াতির’ কিতাবের ১৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- হুজুর গাউসে আ’যম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এরশাদ করেছেন-
مَنِ اسْتَغَاتَ بِي فِي كَرِبَة كَشَفَتْ وَمَنْ نَادَانِي بِاسْمِي فِي شِدَّةِ فَرَجَتْ عَنْهُ وَمِنْ تَوَسَّل بي
إلى اللهِ فِي حَاجَتِهِ فَضِيتُ
অর্থাৎ: যে কেউ বিপদ-আপদে আমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা
করে, তার দুঃখ লাঘব হবে এবং যে কেউ কঠিন মুহূর্তে
আমার নাম নিয়ে আমাকে ডাক দিবে, তার কষ্ট দূরীভূত হবে, আর যে কেউ তার প্রয়োজনে আল্লাহর নিকট আমাকে ওসীলা বানাবে তার অভাব পূরণ হবে। এভাবে আরো বহু অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত, নবী-ওলীর ওসীলায় খোদার রহমত কামনা করা ইসলামের মৌলিক আক্বীদাসমূহের অন্যতম হলেও আমাদের দেশের ওহাবী,
মওদূদী, তবলীগী তথা বাতিলপন্থীরা বিষয়টিকে সম্পূর্ণঅস্বীকার করে। এমনকি ওসীল্য মানাকে শিরক ফতোয়া দিয়ে মুসলিম মিল্লাতকে নবী-ওলী হক্কানী পীর-মাশাইখ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টা চালিয়ে থাকে।
৫. উরস-ফাতিহা
সুন্নী মুসলমানদের আরেক পরিচয় হল, এরা মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা তথ্য আউলিয়া-ই কেরামের উরস ও মৃতব্যক্তি আত্মীয়-স্বজন, মা-বাবার জন্য ঈসালে সাওয়াবের নিয়তে ফাতিহাখালী, কুলখানী বিশ্বাসী এবং এসব আমল শরীয়ত চাহারাম, চেহলাম, মৃতবার্ষিকী সমর্থিত। কারণ ইসলামী শরীয়ত বিরোধী কোন কর্মকাণ্ড আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আক্বীদা ও আমল হতে পারেনা। বুযুর্গানে দ্বীনের মুড়ার পির ভোগারিক্কক পরিবেশন কোরআনখানী মিকর-জয়কার মিনবিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, মূলত তাকেই ওরস হিসেবে আমরা জানি ও চিনি। ওরস শব্দটা চয়ন করা হয়েছে পবিত্র হাদীস শরীফের ভাষ্য হতে। মিশকাত শরীফের اثبات عذاب النظر শীর্ষক অধ্যায়ে রয়েছে নবীজী ইরশাদ করেন- মৃতব্যক্তিকে কবরে রাখার পর মুনকার-নাকীর ফেরেশতাদ্বয় পরীক্ষা নেয়ার পর যখন মৃতব্যক্তি যথাযথ ও সঠিক উত্তর প্রদান করে কৃতকার্য হয়, তখন তাকে ফেরেশতারা বলেন-
لَمْ كَنَوْمَةِ الْعُرُوسِ الَّتِي لَا يُوْقَطْهُ إِلَّا احَبَ أَهْلَهُ إِلَيْهِ অর্থাৎ তুমি ঘুমিয়ে পড়, ঐ দুলহানের মত, যাকে দুলহাই এসে কেবল জাগ্রত করবেন। ফেরেশতাদের ভাষায় সেদিনটি তার উরসের দিন।
বছরের নির্ধারিত দিন তারিখে বুযুর্গানে দ্বীনের ইন্তিকালের দিবসই অন্যান্য বান্দা এবং ভক্ত মুরীদরা উরস দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছর উহুদ যুদ্ধের শহীদদের কবরে যেতেন।। সূত্র: ফতোয়ায়ে শামী।
আউলিয়া-ই কেরামের উরস উপলক্ষে তাঁদের পবিত্র মাযার যিয়ারত করার বৈধতা উল্লিখিত হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদীস ও ফিক্বহ শাস্ত্রবিদ হযরত শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘ফতোয়ায়ে আযীযিয়া’র ৪৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
“অনেক লোক একত্রিত হয়ে খতমে কোরআনের আয়োজন করে খাদ্যদ্রব্য, শিরনী ফাতিহা দিয়ে সমবেত লোকদের মাঝে বিতরণ করার রীতি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার ও খোলাফা-ই রাশিদীনের যুগে প্রচলিত অলজ্জমান ২৮
ছিলনা। কিন্তু কেউ যদি বর্তমানেও করে তাতে কোন খতি নেই: বরং এতে জীবিতগণ মৃতদের দ্বারা লাভবান হয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের অনুসারী সং মুসলমানগণ মহা ধুমধামের সাথে শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে আল্লাহর ওলীদের উরস পালন করে থাকেন। পক্ষান্তরে আমাদের দেশের বাতিল সম্প্রদায় ওহাবী, মওদসী। তবলীগীরা এর ঘোর বিরোধিতা করে। অথচ, তারা জানেন তাদের নেতা মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী ও মৌং আশরাছ আলী থানভীর পীর সাহেব হাজী ইমদাদল্লাহ মুহাজেরে মন্ত্র। স্বীয় রচিত ‘ফায়সালায়ে হাফত মাসআলা’ পুস্তিকায় উয়ে। জায়েয হওয়া সম্পর্কে জোরালে। অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এবং বলেছেন-
‘ফকীরের (আমার) নিয়ম এই যে প্রতিবার আি পীর-মুর্শিদের পবিত্র আত্মার প্রতি ঈসালে সাওয়াব বং থাকি। প্রথমে কোরআনখানী হয়, এরপর যদি সময় যায়। মীলাদ শরীফের আয়োজন করা হয় এবং উপস্থিত ব্যাক্তিদে মধ্যে খাবার পরিবেশন করা ও এর সাওয়াবও বখশিশ দ হয়।”
আর ফাতিহার নিয়মটি হল পবিত্র কোরআনের সূরা।
ফাতিহা’ সূরা ইখলাস এবং কতিপয় সূরা তিলাওয়াত বার নবীজীর উপর কয়েকবার দুরূদ শরীফ পাঠ করে মৃতকড়ি রূহে বখশিশ করা। দুররুল মুখতার কিতাবে একটি হাদীস শরীফের উদ্ধৃতি এসেছে, “যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস পাঠ করে এর সাওয়াব মৃতব্যক্তিদের প্রতি বখশিশ করে দেয়, তা মৃতব্যক্তিদের প্রদান করা হবে। এভাবে ইসলামী আইনশাস্ত্রসমূহে এর বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। এ ধরনের অতীব বরকতময় ও ফজীলতপূর্ণ ইবাদতকেও আমাদের দেশের ওহাবীরা বিদ’আত বলে আখ্যায়িত করেছে। তাদ্যে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার জন্য কোন ফাতিহাখানী র ঈসালে সাওয়াবের ব্যবস্থাও করেনা।
৬. ইক্বামতের সময় কখন দাঁড়াবেন
এ বিষয়ে সুন্নী মুসলমান এবং বাতিলদের মাঝে পার্থভা পরিলক্ষিত হয়। জামা’আত সহকারে নামায পড়ার পূর্বছরে যে ইক্বামত দেয়া হয়, তখন ইমাম বা মুআযয়িন যদি বাতিল আক্বীদাপন্থী হয়, তাহলে উচ্চস্বরে বলে থাকে ‘উঠে দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করুন।’ মুসল্লীদেরকে রীতিমত দাঁড় করিয়ে তারপর ইক্বামত আরম্ভ করে। কিন্তু ইসলামী শরীয়তের আইনশাস্ত্রের আলোকে বাস্তবতা সম্পূর্ণ এর বিপরীত।
ফতোয়ায়ে আলমগীরী, রদ্দুল মুহতার (ফতোয়ায়ে শামী। সহ সকল প্রসিদ্ধ ফিকহশাস্ত্রে রয়েছে- জামা আতসহকারে নামায়পড়ার ক্ষেত্রে ইকামতদানকারী বাতীত বাকি ইমাম ও মুরতাদীগণ সবাই দাঁড়াবেন ى على الصلة)হাইয়া অলাস সালাত) বলার সময়। এমনকি ফতোয়ায়ে ২ অলমগীরীতে আরো উল্লেখ আছে, ইকামতের সূচনালগ্নে সী মসজিদে প্রবেশ করলে সেও বসে পড়বে, আর হইয়া প্রবাস সালাহ’ বলার সময় দাঁড়াবে। এর পূর্বে উড়ানো মাততত্র। এ ধরনের একটি প্রসিদ্ধ মাসআলা নিয়েও এদের বাড়াবাড়ি। কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের প্রসারী ইমাম ও মুসল্লীরা এ বিষয়ে শরীয়তসম্মত পন্থায় ও
তায়ামিত নিয়মানুযায়ী পালন করে থাকেন।
৭. নামাযের পর মুনাজাত
মামাযের পর আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে দু’আ-মুনাজাত করতেও এদের আপত্তি। বাংলাদেশে ওহাবী মতবাদ প্রচারের প্রাচীন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা থেকে ফতোয়া জারি করা হয়েছে- ফরজ নামাযের পর মুনাজাত শকরা নাজায়েয এবং বিদ’আত। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, চাদেরই আরেক প্রতিষ্ঠান পটিয়া মাদরাসা ওয়ালারা মুনাজাতের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করে হাটহাজারীর ফতোয়া খণ্ডন করেছে। মূলতঃ এ বিষয়টি নিয়ে ওহাবীরাও এই প্রটেক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হয়নি। মহান আল্লাহর এক দরবারে প্রশংসা এজন্যই যে, সুন্নী মুসলমানরা যুগ যুগ ধরে মি, এ হরকতময় আমল করে আসছেন আর এখনও করে ৫. যাচ্ছেন। আমাদের দলীল হল, পবিত্র কোরআনরে বাণী-
فَإِذَا فَرَغْتَ فَانصَبْ
আঁৎং “অতএব, যখন আপনি নামায থেকে অবসর হবেন ওই তখন দু’আর মধ্যে (পরকালের) পরিশ্রম করুন (যেহেতু নামাযের পর দু’আ কবুল হয়)।”
তিতে আয়াতের তাফসীরে প্রসিদ্ধ সকল তাফসীর গ্রন্থে নামাযের পর দু’আর কুথা উল্লে হয়েছে। তাছাড়া নবীজীর الدَّعَاء مَحْ العبادة দু’আ হল ইবাদতের গেজ। নামাযের মত শ্রেষ্ঠ একটি ইবাদতের পর যদি দু’আ না হয়, তাহলে আর কখন করা হবে, তার উত্তরে বাতিলপন্থীরা কী বলবে আমাদের জানা নেই।
. জানাযার পর মুনাজাত
নায়ে উত্ত৮ না। ইর প্রকার
জানাযা যদিও বা একপ্রকার দু’আ মনে করা হয়, কিন্তু সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে রয়েছে, নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এটা নামায বলেছেন। এতে রুক-সাজদা না থাকলেও অন্যগুলো রয়েছে। যেমন- পবিত্রতা অর্জন করা, কেবলামুখী হওয়া, নিয়ত করা ইত্যাদি নামাযের মতই শর্ত। সুতরাং নামাযের পর যেহেতু মুনাজাত
করা মুস্তাহান, তদ্রুপ জানাযার পরও দু’জ মুনাজাত করা মুস্তাহাব ও ফজীলতপূর্ণ আমল বলে স্বীকৃত। হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে-
قال الشي إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ
فَاخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاء
অর্থাৎ নবীজী ইরশাদ করেছেন, তোমরা যখন কোন মৃতব্যক্তির নামাযে জানাযা পড়বে, অতঃপুর তার জন্য একাগ্রচিত্তে দু’আ কর। মিশফাত শরীফ।
এ ছাড়া, মিরকাত, মবসূত, কানযুল উম্মাল, আশি আতুল লুম’আত, ফাতহুল কুদীর, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়াসহ বহু কিতাবে এর সপক্ষে দলীল পাওয়া যায় এবং আহলে সুন্নাতের অনুসারীরা এ আমলটি নিয়মিত পালন করলেও ওহাবী-মওদূদী, তাবলীগী, কাদিয়ানী ও আহলে হাদীসরা
এর বিরোধিতা করে।
৯. কবর যিয়ারত
‘কবর যিয়ারত রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সুন্নাত। নবীজী পবিত্র বরকতময় রাতসমূহে জান্নাতুল বক্কীতে গিয়ে কবর যিয়ারত করতেন মর্মে বহু বর্ণনা সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় এবং তিনি ইরশাদ করেছেন-
كُنتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ إِلَّا فَزُورُوهَا
لأَنَّهَا تَذْكِرَ الْمَوْتِ
অর্থাৎ: “আমি (একসময়) কবর যিয়ারতের ব্যাপারে তোমাদেরকে নিষেধ করতাম। আর এখন বলছি তোমরা কবর যিয়ারত কর, কেননা এটা মৃত্যুকে সস্মরণ করিয়ে দেয়।” মিশকাত। কবর যিয়ারতের দ্বারা মৃত্যুব্যক্তি ও জীবত ব্যক্তি উভয়পক্ষের উপকার হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাতিলপন্থীরা এমন পুণ্যময় আমলকে বিদ’আত ফতোয়া দিয়ে থাকে। সাধারণ মানুষের কবর যিয়ারতের ব্যাপারে তো বটে, এমনকি সমগ্র কুল কা-ইনাতের সর্দার আমাদের প্রিয় আকা ও মাওলা সরকারে আলামীন সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র রওজা মুবারক যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনা শরীফ যাওয়াকেও শিরক ও হারাম ফতোয়া দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনা। অথচ, পবিত্র কোরআন হাদীসের অনেক জায়গায় নবীজীর রওজা মুবারক যিয়ারতের ফজীলতের
কথা সুস্পষ্ট এসেছে। ইরশাদ করেছেন- مَنْ زَارَ قَبْرِي بَعْدَ مَمَاتِي فَكَانَمَا زَارَنِي فِي حَيَاتِي
অর্থাৎ নবীজী ইরশাদ করেন, “আমার ইন্তিকালের পর যে আমার কবর শরীফ যিয়ারত করল, সে যেন আমাকেজীবদ্দশায় যিয়ারত করল।”
উল্লেখ্য যে, কবর যিয়ারত, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা আতের অন্যতম আক্বীদা ও বরকতপূর্ণ আমল।
১০. পীর-মুর্শিদের হাতে বাই’আত গ্রহণ করা হক্কানী পীর-মুর্শিদের হাতে বাই’আত গ্রহণ করা সুন্নাত।
সাহাবীগণ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নবীজীর পবিত্র হাতে বাই’আত গ্রহণ করেছিলেন: যার বর্ণনা কোরআন-হাদীসে রয়েছে।
শরীয়তের সম্পূরক আরেকটি বিষয় হল, তরিকত। এ পরিত্র ধারা সরাসরি রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পক্ষ হতে মাওলা আলী শেরে খোদা রদ্বিয়াল্লাহ আনহু’র মাধ্যমে আহলে বায়তের সিলসিলায় পথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। আর আহলে বায়তের মহান ব্যক্তিগণ দয়া করে যাদেরকে খিলাফত দানে ধন্য করেছেন তারা যুগ যুগ যার অরি পায়াতের পর্যায়ে নিয়ে আসছেন তরিকতের জগতকে ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধ করে এবং গোমরাহী থেকে রক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ‘আত্মশুদ্ধিই জাগতিক ও পারলৌকিক সফলতার চাবিকাঠি।” এ দীক্ষাই হল ইলমে তাসাউওফের মূল প্রতিপাদ্য। সূফী-দরবেশরা অক্লান্ত পরিশ্রম আর সাধনা করে প্রতিপাদ্য। সূফী-দরবে খ্যাপ করেন আর সাধারণ মানুষকে সে পথে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। এই ইলমে তাসাউওফের পক্ষে পবিত্র কোরআন-হাদীসে অনেক উদ্ধৃতি পাওয়া যায়। শরীয়তসিদ্ধ এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মি. মওদূদী সাহেব সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। ডায়বেটিস রোগীদের যেমন চিনি থেকে দূরে থাকতে হয়, সেভাবে তাসাউওফ থেকে মানুষকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে মওদুদী সাহেব নিজেকে ভ্রান্ত হিসেবে প্রমাণ করেছেন। নেতার কথা মত বর্তমান মওদূদী মতবাদীরা গুলী-দরবেশ, হক্কানী পীর-মাশাইখদের হাতে বাই’আত ও মুরীদ হওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করে চলেছে।
উপসংহার: পরিশেষে বলতে হয়, পবিত্র কোরআন-সুন্নাহ, ইজমা-ক্বিয়াস এ চারটি মূলনীতির সমন্বয়ে ইসলামী শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত এবং যারা এ মূলনীতি চতুষ্ঠয়কে সামনে রেখে সঠিক পথে আমল করে যাচ্ছেন তারাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত। বর্তমান বিশ্বে সেই আহলে সুন্নাতের অনুসারীরা এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত। পাশাপাশি বাতিল মতাবলম্বীরা সুসংগঠিত হওয়ার কারণে বাহ্যিকভাবে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের দেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানকার বাতিলপন্থীরা লাগাতার কর্মসূচি আর সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় এগুতে এগুতে বর্তমানে প্রশাসন ও
রাজক্ষমতার কিছু অংশও দখল করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এতে সন্নী মুসলম নদের হতাশ হবার কোন কারণ নেই। সত্যিকার পরিস খ্যানে দেখা যাবে, এরাই সংখ্যালঘু। আগেই বলা হয়ে.ছ. এক সময় মু’তাযিলারা সমগ্র মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দখল করে নিয়েছিল, কিন্তু আজ তারা কোথায়? এত বে অনেক মতবাদের দাপট বিশেষ মুসলমানরা প্রত্যক্ষ করেছেন, আবার দেখেছে তাদের শোচনীয় পত।। মহাসত্য কথা হল, আল্লাহর প্রিয় ওলী আউলিয়া পীর-মাশাইখদের মাধ্যমেই ইসলাম এদেশে এসেছে। সুতরাং ওলীবিদ্বেষী বাতিলপন্থীদের সাময়িক উত্থানে ভেঙ্গে পড়ার কোন কারণ নেই। আউলিয়াই ইযামের আধ্যাত্মিক অভিযান যখন শুরু হবে, তখন বাতিলক পালাবার জায়গাও পাবেনা।
সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বোমা হামলার সাথে জড়িত জেএমবির ক্যাডাররা ওলী-আল্লাহদের বাতিলপন্থী ওহাবী-মওদুদী-তবলীগী, হাদীসদের দোসর। এরা হযরত শাহ জালাল রহমাতৃরছি ২৫০ আলায়হি’র মাযারে, হযরত সৈয়্যদ গীসুদারাজ কেরা ইস রহমাতুল্লাহি আলায়হির পবিত্র মাযারে হামলা চালাবার একের দুঃসাহস দেখিয়েছে। কিন্তু এ দেশের মানুষ কী দেখল, কোন আল্লাহর ওলীদের সাথে বেআদবী করার পর দেরি হয়নি বর বোমাবাজরা একের পর এক ধরা পড়ল। এক পর্যায়ে এদের একারণ সমগ্র নেটওয়ার্ক তছনছ হয়ে গেল। আল্লাহর ওলীর সায়ের বি পৃথ্বিরাজ আর গৌরগোবিন্দের মত প্রতাপশালীরা পর্যন্ত টিতে। থাকতে পারেনি। সেক্ষেত্রে এসব চুনোপুটি বাতিলরা কিভাবে প্রানী পা বাড়ালো এ ভয়ঙ্কর পথে? নিশ্চয় আল্লাহর ওলীদের দুনিয়াতে ও আখিরাতে কোন ভয়-চিন্তা নেই ও আফসোস আশঙ্কাও নেই। কাদিয়ান-আহলে
বিস্তারিত আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্ট প্রতিভাত হয়েছে আশা যে, একটি দল যুগে যুগে মহান রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ঐক্য, ওয়াসাল্লাম, সাহাবা-ই কেরাম এবং আউলিয়া-ই ইযামো সনকার ম অনুসৃত পথে-মতে নিজেদের সামগ্রিক জীবন পরিচালন পর্বপ্রতি করে যাচ্ছেন তার নামই হল ‘আহলে সুন্নাত ওয়ত সংঘাত জামা’আত’, আর এ দলের বিপরীতে যারা আছেন অনাযায় তা সবাই বাতিল ও গোমরাহ।
যাবে
সত্য সমাগত আর মিথ্যা অপসৃত আর মিথ্যা তো এ বন্ধ সত অপসৃয়মান হবারই। আল্লাহ পাক আমাদেরকে হকপনার এইদিন সূ পরিচালিত করুক; আমীন।